কর্পূরের তীব্র গন্ধ পাচ্ছি। সাথে চা পাতা। নিহার শরীর থেকে ভকভক করে গন্ধটা ভেসে আসছে। অন্তত আমার তাই মনে হচ্ছে। আজ একত্রিশে অক্টোবর। আমাদের প্রথম বার্ষিকী। গতবছর টুনিপাড়ার হ্যালুইন পার্টিতে ওকে প্রপোজ করি। নিহার চোখে আজ অন্য কিছু। কেমন যেনো হিংস্র একটা দৃষ্টি। আমার গা কাটা দিয়ে উঠে। এই দৃষ্টি সহজে ধরা যায় না। আমি ওকে চিনি। ও সাধারনত এমন না। খুবই নমনীয় প্রকৃতির। তার চোখে এমন দৃষ্টি মানায় না। আমরা ছাদের রেলিংএ পা দুলিয়ে বসে আছি। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিহা বলে, -আজকের রাত নিয়ে একটা উপকথা আছে, জানো? -না। -আজ রাতে মৃত আর জীবিতদের মাঝে যেই দেয়ালটা আছে, সেটা তুলে দেয়া হয়। মৃতরা আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এই রাতে। -তুমি এসবে বিশ্বাস করো? -না করি না। এটা তো উপকথা। মনে রাখতে হয় শুধু। -হুম। -জানো? প্রতি বছর এই দিনে আমি একজন মানুষকে হত্যা করি। -তাই নাকি? কেনো? -কারন আমি এই পৃথিবীতে থাকতে চাই। একজন মানুষকে উৎসর্গ না করলে ওরা আমাকে নিয়ে যাবে। মৃতদের এই পৃথিবীতে কোনো স্থান নেই। আমার বদলে তাই ওদের ধোকা দিয়ে অন্য একজন মৃতকে পাঠিয়ে দেই। -তারমানে বলতে চাচ্ছ, তুমি মৃত? নিহার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ভয় পেয়ে যাই। ওর দৃষ্টি ভয়ংকর রকমের কঠোর। যেনো চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। হঠাৎ নিহা ফিক করে হেসে উঠে বলে, -মজা করছি। তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? আমি ভূত ফুত না। আমি সাইকোপ্যাথ। প্রতি বছর হ্যালুইনের রাতে মানুষ খুন করি। যাই হোক। তোমার গলায় ওটা কিসের দাগ? -জানি না তো। কেমন দাগ? -গলায় ফাস দেয়ার মত দাগ। কালচে। -ধুর। ভয় লাগাচ্ছ কেনো? -না সত্যি। নিহা আমার গলাটা ছুঁয়ে দেখায়। তারপর হঠাৎ কিছু বোঝার আগেই সজোরে ধাক্কা দেয়। আমি ছ'তলা ছাদ থেকে সোজা পিচ ঢালা রাস্তায় আছড়ে পড়ি। কপাল ফেটে যায় জঘন্য ভাবে। অদ্ভুত ব্যাপার, কপাল ফাটলেও একফোটা রক্তও বের হয় নি। আমি শরীর ঝারা দিয়ে উঠে দাড়াই। নিহা ছাদ থেকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। ওর চেহারায় আতংকের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। যেনো ভূত দেখছে। নিহা জানে না, গত রাতেই আমি সুইসাইড করে মৃতদের দুনিয়া চলে গিয়েছিলাম। আজ হ্যালুইন নাইট বলেই পৃথিবীতে আসতে পেরেছি। শুধু মাত্র ওর জন্য। যাই হোক, আবার চলে যাবার সময় হলো। হেঁটে চলছি অন্ধকারের দিকে। শরীরে কর্পূরের তীব্র গন্ধ নিয়ে।
Posted By: shakib (Premium User!)
Post ID: 3474
Posted on: 5 years 10 months ago
Authorized by: holud_himu