লেখকঃ A_s_A . মেয়েটি মিষ্টি কন্ঠে বললো... -আমি পুতুল -সত্যি তুমি পুতুল আপু! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! -স্বপ্ন না এটাই বাস্তব। টিনা তোর কথা আমাকে সব বলেছে। -ওহহ। তা কি মনে করে ফোন দিলা? -তুই আমার সাথে কাল দেখা করতে পারবি? -কাল কিভাবে সম্ভব। বাড়িতে আসতেই তো পুরো ১দিন লাগে। -তুই যেমন করেই হোক কাল বাড়িতে আয় প্লিজ। অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে। -কি প্রবলেম? আর আমি এসে প্রবলেম কিভাবে সলভড করব? -তুই আগে আয়। তারপর তোকে সব বুঝিয়ে বলব। -দেখো আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি আজ দুদিন হলো। কাল কিভাবে বাড়িতে যাই বলো? -তুই কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসিস? যদি সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাহলে কালই বাড়িতে চলে আয়। . পুতুলের মুখে এই কথা শোনে আর এক মুহুর্ত দেড়ি করলাম না। নিশ্চুই কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। সাথে সাথেই কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাত ৯টার বাসে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্য। বাড়িতে ফিরলাম পরদিন আছরের আজানের কিছুক্ষণ পর। বাড়িতে আসতে দেখে বাড়ির সবাই তো অবাক। সবাই বললো, কেন বাড়িতে এলাম। আমি সবাইকে মিথ্যা বললাম, বলেছি আমি যেখানে থাকি তার পাশের বাসায় আজ এক ছেলে খুন হয়েছে। ভয়ে চলে এসেছি। আমার কথা শোনে আম্মা বললো, দরকার নাই বাবা আমার চাকরির। তুই যে সুস্থ অবস্থায় আমার বুকে ফিরে এসেছিস এটাই আল্লাহর কাছে লাখ লাখ পাওয়া। . আহা আজকাল সত্য কথার কোনো দাম নাই। মিথ্যা বললাম তো সবাই খুশি। আম্মা খাবার দিলো খাবার খাওয়া শেষে পুতুলকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। মহা টেনশনে পরে গেলাম। আম্মা এসে বললো, জানিস পুতুলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পরশুদিন বিয়ে। ওর বাবা এসে আমাদের সবার দাওয়াত দিয়ে গেছে। ছেলে লন্ডন থাকে। এই কথা শোনে আসমান ভেঙে আমার মাথার উপর পরলো। যাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি তার বিয়ে অন্যজনের সাথে। আম্মার কথা শোনে যতটা খারাপ লেগেছে তার থেকে বেশি ভালো লাগলো পুতুলের কথা মনে পরে। কারণ পুতুল তো আমাকে নিজেই ভালোবাসার কথা বলেছে। আর এক মিনিটও দেড়ি করা যাবেনা। দৌড়ে পুতুলদের বাড়িতে চলে গেলাম। পুতুল আমাকে দেখে মনে হলো হাতে আসমান পেয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। পুতুল চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে বললো বাড়ির পিছনে যেতে। আমি বাড়ির পিছনে বাঁশ বাগানের পাশে দাড়িয়ে আছি কিন্তু পুতুল তো আসছেনা। কি মশা মাইরে। মেয়েদের ভালোবাসা পেতে হলে এমন দু একটা মশার কামড় খেতে হয়। কিন্তু এখানে তো দু একটা না হাজার হাজার মশা। . অবশেষে পুতুল আসলো। -এই আমাকে মশার কামড় খাওয়ানোর জন্য কি এখানে পাঠিয়েছো? -আর বলিস না। বাড়িতে লোক ভর্তি মেহমান। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়েছে। -ওকে, কি বলবা বলো? - জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে -হুম আম্মা বলেছে। -কিন্তু আমি এই বিয়ে করব না। তুই আমাকে প্রপোজ কর... পুতুলের মুখে এই কথা শোনে দুষ্টামি করে পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বাহির করে হাঁটু গেড়ে ১০০ টাকা দিয়ে পুতুলকে বললাম, l love you পুতুল ঠাশশ ঠাশশ বসিয়ে দিলো। তবে এই থাপ্পড় রাগে নয় ভালোবেসে দিয়েছে -বলদ একটা... টাকা দিয়ে কেউ প্রপোজ করে? -আমার কাছে তো ফুল টুল নাই। মনে করো এই টাকাই ফুল। -ধ্যাত। ভালই ফাজিল হয়েছিস না! এই নে গোলাপ। ঘর থেকে নিয়ে এসেছি। -ফুল এনেছো আগে বলবা না! আমি গোলাপ দিয়ে পুতুলকে প্রপোজ করলাম। সে একসেপ্ট করলো। তারপর বাংলা মুভির মতো গান হলো না। পুতুল আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। পরশু আমার বিয়ে। আমি তোকে না পেলে যে বাঁচব না রে। -তুমি বাঁচবে। বিয়াও ভঙ্গ হবে। এবার আমাকে তুমি করে বলো। -ওকে। তুমি, তুমি, তুমি -এবার তোমার হবু স্বামীর ফোন নাম্বার দাও? -আমার হবু স্বামী মানে? -ওহহ স্যরি। যার সাথে তোমার বিয়া হবার কথা তার নাম্বার দাও। পুতুল আমাকে সেই ছেলের নাম্বার দিলো। এবার পুতুলেকে নিয়ে কিছু অন্তরঙ্গ সেল্ফি তোলে সেই ছেলেকে MMS করে পাঠালাম। ফোন দিয়ে বললাম, আমি বাংলা ভাইয়ের লোক। পুতুলকে বিয়া করা মানে মরার আগে নিজের কবর নিজেই খনন করা। সেই ছেলে ফোনে আমার এসব কথা শোনে অনেক ভয় পেয়েছে মনে হয়। আমার কথার কোনো উল্টো জবাব দেই নাই। আর এও বলেছি; বিয়েটা যেনো ভেঙে দেয়। পুতুলের বাবা যেনো এই সেল্ফি সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে। ছেলেটা আমার কথা শুনেছে। ফোন রাখার সময় সালাম দিয়ে ফোন রাখল। পুতুলকে বললাম, বাসায় গিয়ে যেনো বলে এই বিয়ে করবে না। পতুল বললো... -আব্বা যদি জানতে চায় কেনো বিয়ে করব না তখন কি বলব? -বলবা তুমি আরো পড়ালেখা করতে চাও। তারপরও যদি না মানে তাহলে তোমার কিছুই বলতে হবেনা। জামাই তো আর আসবে না। আর জামাই না আসলে এতো কিছু বলে কি লাভ? -ওকে তাহলে এখন যাই। তোর নিজের খেয়াল রাখিস। -উহহহ তুই না তুমি। -স্যরি তুমি। তাহলে এবার যাই। যাবে ভালো কথা। আমি আমার গাল বাড়িয়ে দিলাম। পুতুল বললো এখন কিছু না। যা হবার বিয়ের পর হবে। . আমি আমার বাড়ি চলে এলাম। পরশুদিন অর্থাৎ শুক্রবারে পুতুলের বিয়ে হবার কথা ছিলো। শুক্রবার সকালে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে আছি। আম্মা দরজায় থাবা দিয়ে বললো... -রাজ এই রাজ। তাড়াতাড়ি উঠ বিয়েতে যাবি। -কার বিয়ে? -পুতুলের। -আমার বিয়ে আর আমি জানিনা। -কি বল্লি। -না কিছু না। ঘুমের ঘোরে কি যে বলে ফেলেছি। আম্মাকে ডাক দিয়ে বললাম; কে কে যাবে? -শুধু তুই যবি। দেখ তোর বাবা পুতুল কে গিফট দেওয়ার জন্য কি সুন্দর শাড়ি এনেছে। আব্বা এই অসুস্থ শরীর নিয়েও বাজারে যায়! ওকে আসছি আমি। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। আম্মা নাস্তা দিলো নাস্তা খেলাম। আম্মাকে বললাম ভাত দিতে। -এখন ভাত খাবি ক্যান? বেলা ১২ টা বাঁজে। কিছুক্ষণ পর বিয়ে আরাম্ভ। এখন খেলে বিয়েতে গিয়ে খাবি কি? -তুমি এসব বুঝবেনা। দাও তো... পেট ভরে খাবার খেয়ে চলে গেলাম পুতুলদের বাড়িতে। আব্বার দেওয়া শাড়ি তার হবু বৌমা কে দিতে হবে। পুতুলকে শাড়ি দিয়ে চলে এলাম। শুক্রবার আর বিয়ে হলো না। আর কখনও বিয়ে হবেও না। ওহহ স্যরি হবেনা ক্যান হবে। তবে সেটা আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে না। সমাপ্ত
Posted By: frozen_heart
Post ID: 3483
Posted on: 5 years 10 months ago
Authorized by: errol