FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

...এক journey বাই ট্রেন...

...এক journey বাই ট্রেন...


গত ৩০শে জানুয়ারি,২০১৬। সকাল বেলা উঠে হন্তদন্ত করে রংপুর রেল ষ্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। এই শীতের দিনে ৭ঃ৪০ মিনিটের গাড়ী ধরা চাট্টি খানি নয়। যাই হোক একটা অটোরিক্সাতে উঠলাম। মামা ঝড়ের গতিতে তার গাড়ী টানা শুরু করে দিল। মামার গতির কাছে রাস্তা হার মেনে অবশেষে ষ্টেশনে পৌঁছেলাম। গিয়ে দেখি গাড়ী নাই! কি ব্যাপার,ট্রেন মিস করলাম নাতো? না,মিস করলাম না। আসলে ট্রেন তখনো আসে নি। বাংলাদেশ বলে কথা তো! ৭ঃ৪০ মিনিটের ট্রেন আসলো ৮ঃ০৫ মিনিটে! চিন্তা করলাম টিকিট কাটবো কি না? ভাবলাম যে এতদিন তো ফ্রি গেলাম,আজ না হয় টিকিট কেটে উঠি। অতঃপর টিকিট কেটে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন যাত্রা শুরু করলো। মাথা নিচু করে মোবাইল বের করে ফেবু চালাচ্ছি,এখন সময় ৩০ বছর বয়সী মেয়ে/মহিলা এসে বললো,'ভাইয়া উঠেন,আমি বসবো।'
আমি প্রথমে থতমত খেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে
বললাম,'এটা তো আমার সিট,আপনি অন্যখানে দেখেন।
মেয়েঃ না,আমি এখানে বসবো।
আমিঃ না,আমি জায়গা দিব না।
মেয়েঃ না উঠলে কোলে বসবো!!
আমিও রাগ করে বললামঃ বসেন,সমস্যা কি?
কথা শেষ না হতেই সে আমার কোলে................!!!!!!!!
আমি উঠে দাঁড়ালাম। দূর থেকে অন্য একটা মহিলা একটু ইশারা করলো। বুঝলাম যে মাথায় সমস্যা আছে। জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে গিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর একটি ছেলে এসে বললো,'ভাই একটু বসতে পারি?'
আমিঃ বসেন।
ছেলেঃ ধন্যবাদ ভাই।
আমি 'হুমম' বলে মনে মনে ভাবলাম যে ঠান্ডা পরছে তাতে যে আপনি আমার পাশে বসে যে কি উপকার করলেন সেটা তো বলে বুঝাতে পারবো না।
যাই হোক,আবারও মাথা নিচু করে ফেবু চালাচ্ছি। হঠাৎ আসেপাশে শুনতে পেলাম যে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। ভাবলাম আমি আবার
বরযাত্রীর সাথে যাচ্ছি নাতো? নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাথা তুলে দেখলাম। নাহ্ বিয়ে না। বিয়ে নিয়ে যিনি কথা বলছেন তিনি হচ্ছেন আমার সামনের সিটে বসে থাকা ঘটক।
এখন নাকি ট্রেনেও বরযাত্রীরা যায়। একবার চিন্তা করলাম যে আমি যদি বিয়ে করি তাহলে ট্রেনের বগি ভাড়া করবো। নাতিদের সামনে গল্প করতে
পারবো যে আমি ট্রেন ভাড়া করে বিয়ে করতে গেছি,হু......!!! যাই ঘটক সাহেব জানি কার কার সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। আমি আবারও মাথা
নিচু করে ফেবু চালাচ্ছি। হঠাৎ একটা ফোন আসলো।
'দোস্ত,১৫ দিন থেকে জ্বর আর কাশি,কি খাবো? আর হ্যাঁ,পায়খানাও ক্লিয়ার হয় না।'
আমিঃ ১৫ দিন থেকে জ্বর? আচ্ছা,জ্বরের জন্য 'অমুক' খা,আর কাশির জন্য 'তমুক' সিরাপটা খাবি। সাথে একটা 'অমুক' এ্যান্টিবায়োটিক খাবি আর পারলে রক্তের টেষ্ট করা।'
এই বলে ফোন কেটে দিয়ে আবারও ফেবু চালাচ্ছি। লক্ষ্য করলাম যে ঘটক আমার দিকে চোখ বড় বড় করর তাকাচ্ছে। যাই হোক,কিছুক্ষণ পর
ঘটক বলল,'বাবা,আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?'
আমিঃ হুমম...বলেন।
ঘটকঃ কোথায় যাবেন?
আমিঃ দিনাজপুর। কেন?
ঘটকঃ না,এমনি। আপনি কি ডাক্তার?
আমিঃ না,এখনও হইতে পারি নাই। এখনও শিখছি।
ঘটকঃ এখন কোথায় যাবেন?
আমিঃ সদর হসপিটালে। ওখানে আমি কাজ করি।
ঘটকঃ ও আচ্ছা বাবা। ঠিক আছে।
ওনি হয়তো ভেবেছেন যে আমি ওখানে চাকরি করি। যাই হোক,মানুষের ভাবনার উপর আমার হাত নেই।
আমি আমার মত করে বসে আছি। হঠৎ একটা ফকির আসলো। আসলে এখানে হঠাৎ না বললেই ভাল। কারন ট্রেনে ফকিরের অভাব নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় ট্রেনে যাত্রীর চেয়ে ফকিরের সংখ্যাই বেশী! যাই হোক,আমি ২০১২ সাল থেকে ফকিরকে দান করি না। আর করবোও না। কারন ফকির আমাকে ঠকিয়েছে! তবে ২০১২ সালের পর থেকে এপর্যন্ত ২ জনের অনুরোধে ২টা ফকিরকে ২টাকা করে ৪টাকা দান করেছি! যাই হোক,প্রতিদিনের মত আজও বললাম,'নাই বাবাজি'।
এবার ফকির আমার পাশে বসা সেই ছেলের কাছ থেকে টাকা চাইলো। সে বড়লোকী দেখিয়ে পকেট থেকে গদগদ করে ৫টাকা বের করে দিল। আমি মনে মনে ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিলাম। সেও মনে হয় একটু গর্ববোধ করলো। এভাবেই সে আরও ৫-৬টা ফকিরকে দান করলো। আমারও মাঝে মাঝে ওর কাছ থেকে টাকা চাইতে ইচ্ছা করলো। ট্রেনে উঠলে সবার মনে কেন জানি ফকির ফকির ভাবটা চলে আসে। এই যেমন ধরুন,রংপুর থেকে দিনাজপুরেরর ভাড়া মাত্র ৩৫ টাকা। আমরা তবুও টিকিট কাটি না। ফ্রি আসার চেষ্টা করি। অথচ বাসে ১০০টাকা ভাড়া। যতই হোক,বাঙালি তো। আলকাতরা তো মাখার চেষ্টা করবেই।
ঝক ঝক করে ট্রেন চলছে। এমন সময় ঘটক আমার বলল,'বাবা,আপনার সাথে কি আরেকটু কথা বলতে পারি?'
আমিঃ হুমম...বলেন।
ঘটকঃ আপনি কি বিয়ে করেছেন?
আমি একটু হেসে বললাম,'এখনও তো বিয়ে করি নি। তবে বিয়ে তো করতে হবে।'
ঘটক একগাল হেসে বললো,হ্যাঁ,আপনার তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তো কবে নাগাত বিয়ে করতে পারেন?
আমি একটু মজা নেওয়ার জন্য বললাম,'যত তাড়াতি সম্ভব। কারন রান্না করে খাচ্ছি তো।'
ঘটক এবার ৩২ পাটি দাত বের করে হেসে কানে কানে বললো,'আমার কাছে মেয়ে আছে। বিদেশে থাকে। আপনি তো এম.বি.বি.এস,সুন্দর মানাবে। আপনিও ফর্সা,সেও ফর্সা। (ওনি হয়তো আমাকে সরকারি এম.বি.বি.এস ডাক্তার ভেবেছিল)
আমি এবার আকাশ থেকে পরলাম। ভাবলাম এখনে বিয়ে? তাই বলে আবার বিদেশী? আমাকে তো বিক্রি করে দিবে! আমি যে বোকা!
যতই হোক,নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,'মেয়ে ভাল হবে তো!'
ঘটক বললো,আরে না না। মেয়ে খুবই সুন্দর। খুবই ভাল। খুবি ভদ্র।
আমিঃ বেশ বেশ। তো বাঙালি মেয়ে নাই?
ঘটকঃ থাকবে না আবার? শোনেন আমি international ঘটক। সব মেয়ে আমার হাতেই পাবেন।
শুধু তাই নয়,উনি আমাকে international শব্দের মানেও বুঝিয়ে দিলেন। inter মানে সারা,আর national মানে বিশ্ব। মানে উনি সারা বিশ্বের ঘটক। এই বলে উনি কিছু ছবি দেখালেন। আমিও দেখলাম। দেখলাম যে সব ছবিকে আন্টি না বললেও আপু বলা যায়। কারন তাদের বয়স আমার থেকে অনেক!
এবার ঘটক বলল,'বাবা,আপনার নাম্বারটা দিবেন?'
আমিঃ ও হ্যাঁ হ্যাঁ,নিতে পারেন। ০১৭১৭.................।
ঘটকঃ আচ্ছা বাবা,ঠিক আছে ফোনে কথা হবে।
আমি শুধু হুমম বললাম। দিনাজপুর পৌঁছাতে আর বেশী দেরী নাই। আমার পাশের ছেলেটা শুনতে চাইলো যে দিনাজপুর স্টেশন থেকে টারমিনালের ভাড়া কত?
বললাম যে ১৫টাকা। যাই হোক,স্টেশনে নামার আগে মনে হয় সে শেষ বারের মত ফকিরকে ৫টাকা দান করলো। ট্রেন থেকে নামলাম। গেট দিয়ে বের হব এমন সময় সেই ছেলেটি আমার সোয়েটার টেনে ধরে বলল,'ভাই,ফকিরকে টাকা দিতে দিতে এখন আমার কাছে টাকা নেই। আমাকে ১৫-২০ টাকা দাবেন প্লিজ?'
আমি মনে মনে বললাম যে ব্যাটা,দান কর। করুনা দ্যাখা। উদার হ। হাজী মোহাম্মদ মহোসিন হ। যাই হোক,বিপদে যেহেতু পরছে। ১৫ টাকা দিলাম। সে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল।
এবার গেট দিয়ে বের হচ্ছি,এমন সময় টিটি বলল,'আপনার টিকিট কই?'
আমি বললাম,'ভাই টিকিট কাটছি। কিন্তু বের করতে পারবো না। কারন অনেক মালপত্র আমার সাথে।'
একথা বলেই হাঁটা শুরু করে দিলাম। হঠাৎ সে আমার হাত ধরে টানলো আর বললো,চলেন টিটি রুমে চলেন। আপনার সাথে কথা আছে।'
আর কিছু বললাম না। ওনার পিছনে হাটা শুরু করলাম আর মনেমনে বললাম যে দ্যাখ ব্যাটা আজ কি করি। দেখলাম যে ওখানে আরও কয়েকজন টিকিট না কাটা মহান ব্যক্তি রয়েছেন। যাদের ট্রেন ভাড়া সহ দ্বিগুণ ফাইন নেওয়া হচ্ছে। ৩ জন পার পাওয়ার পর আমার পালা।
সিনিয়র টিটি বলল,' কোথা থেকে আসছেন?'
আমিঃ রংপুর থেকে।
টিটিঃ আপনাকে ফাইন ও ভাড়া সহ ২০০ টাকা দিতে হবে!'
আমিঃ কেন টাকা দিব?
টিটিঃ টিকিট কাটেন নি কেন?'
আমিঃ আমি টিকিট কাটিনি এটা আপনাকে কে বললো?
টিটিঃ টিকিট যদি কেটে থাকেন তাহলে এখানে কেন?
আমিঃ আপনাদের লোক আমাকে ধরে নিয়ে আসলে আমি কি করবো?
বলেই ব্যাগ থেকে টিকিট বের করে দেখালাম। সিনিয়র টিটি অন্য টিটির উপর রাগান্বিতভাবে তাকালো।
আর আমি বলতেই থাকলাম,' আপনার লোক কি আমার কথা একবারও শুনছে? আপনাদের সরকার এখানে রাখে কিসের জন্য? আপনারা কি মানুষের সেবা করার জন্য আছেন,নাকি মানুষকে বিরক্ত করার জন্য আছেন? নিশ্চয়ই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন!'
সিনিয়র টিটি বললো যে ভাই এখন আপনি যান প্লিজ। আমরা অনেক স্যরি!
আমি এবার জুনিয়র টিটির মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ভিলেনি মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে আসলাম। আর ভাবলাম যে আমরাও পারি!
তারপর কয়েকদিন কেটে গেল। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
ফোন ধরে সালাম দিয়ে বললাম,'কে?'
ওপাশ থেকে বললো,'বাবা আমি ইন্টারন্যাশ্নাল ঘটক! আপনার জন্য একটা পাত্রী দেখছি। আফগানিস্তানে বাসা।'
আফগানিস্তান শুনে আমি শুধু চারদিকে ঠুস ঠাস গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম!

*




0 Comments 608 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024