FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

ডার্ক ম্যাটার ঃ শেষ পর্ব

ডার্ক ম্যাটার ঃ শেষ পর্ব

*

৪.
গত একশত বছরের চারভাগের প্রায় তিনভাগ সময় ধরে ডার্ক ম্যাটারকে শনাক্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে, এবং এখনো হচ্ছে। এখন, কণা পদার্থবিজ্ঞানীরা একটা ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত: ডার্ক ম্যাটারের মধ্যে এখনো অনাবিষ্কৃত এমন ধরনের কণারা আছে, যারা সাধারণ পদার্থের সাথে মহাকর্ষের মাধ্যমে মিথষ্ক্রিয়া করে। এছাড়া আর কোনোভাবে এরা পদার্থ কিংবা আলোর সাথে হয় একেবারেই মিথষ্ক্রিয়া করে না, আর নাহয় করলেও খুবই দুর্বলভাবে করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্টিকেল এক্সেলারেটর বা কণা ত্বরক যন্ত্রগুলো নানা ধরনের কণার মাঝে সংঘর্ষ ঘটিয়ে ডার্ক ম্যাটারের কণা উৎপন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদিকে, বিশেষভাবে ডিজাইন করা মাটির নিচের গবেষণাগারগুলোতে পরোক্ষভাবে ডার্ক ম্যাটারের কণা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি অন্যান্য কণার মতো গুপ্তবস্তুর কণা মহাকাশ থেকে কোনোভাবে পৃথিবীতে ছুটে চলে আসে, তাহলে যেন তাদেরকে শনাক্ত করা যায়। এই গবেষণাগারগুলো মাটির নিচে স্থাপন করার কারণ, আমাদের জানা কোনো মহাজাগতিক কণা যেন গুপ্তবস্তুর ছদ্মবেশে ডার্ক ম্যাটার কণা শনাক্তকারী যন্ত্রকে ধোঁকা দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা। পৃথিবীপৃষ্ঠ প্রাকৃতিকভাবেই এই সুরক্ষা দেয় গবেষণাগারগুলোকে।

হ্যাঁ, হতে পারে এর সবই অহেতুক ঝামেলা, দিনশেষে হয়তো এর কোনোটিই কোনো কাজে আসবে না। কিন্তু, ছলনাময়ী গুপ্তবস্তুর কণার কথা ভেবেচিন্তে সেটা শনাক্ত করার একটা কিছু ব্যবস্থা করে রাখাটা আসলে প্রয়োজন। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ নিউট্রিনো।



এরা সাধারণ কণার সঙ্গে খুবই সামান্য পরিমাণ মিথষ্ক্রিয়া করে। তারপরও এদের কথা অনুমান করে সেই হিসেবে আইসকিউব অবজারভেটরি নির্মাণের পরে একসময় এদেরকে ঠিকই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে।

ডার্ক ম্যাটারের কণাও হয়তো এমন বিরল কোনো মিথষ্ক্রিয়ার ফলে ধরা দিতে পারে। কিংবা হয়তো নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল কিংবা তড়িৎচৌম্বক বল ছাড়া ভিন্ন কিছুর মাধ্যমে। এই তিনটি বল আর মহাকর্ষ- এরাই হচ্ছে মহাবিশ্বের চারটি মৌলিক বল, যাদের মাধ্যমে আমাদের জানা সকল কণা নিজেদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া করে।

অর্থাৎ, উপায় কেবল দুটো। হয় ডার্ক ম্যাটারের কণাকে শনাক্ত করার জন্যে আমাদেরকে আগে নতুন কোনো একটি বল বা এক শ্রেণীর বলকে আবিষ্কার করতে হবে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বুঝে নিতে হবে, যার মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের কণারা মিথষ্ক্রিয়া করে; অথবা ডার্ক ম্যাটারের কণারা সাধারণ বলগুলোর মাধ্যমেই খুব, খুবই দুর্বলভাবে মিথষ্ক্রিয়া করে এবং সেই হিসেবেই আমাদের একে শনাক্ত করতে হবে।

তবে, ডার্ক ম্যাটারের যে প্রভাব আছে, সেটি নিখাদ বাস্তব। আমরা কেবল জানি না, জিনিসটা আসলে কী।
পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, ডার্ক ম্যাটার মহাকর্ষ সৃষ্টি করে এবং এর প্রভাব আমাদের জানা সাধারণ পদার্থদের উপরেও পড়ে। ব্যাস, এটুকুই। এত এত বছর পরেও আমরা একে আর কিচ্ছু করতে দেখিনি, কিংবা তেমন কিছু আবিষ্কার করতে পারিনি।



মহাবিশ্বের ইতিহাস প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস, সেখানে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুরো বিপ্লবটুকু হয়েছে মোটামুটি গত দু'শো বছরে। যারা এই লেখাটি পড়ে ভাবছেন, বিজ্ঞানীরা জানেনটা কী!— তাদের জন্য বলি, পৃথিবীর এক কোনায় ছোট্ট একটি ঘরে বসে আমরা চাইলেই সৌরজগতের গ্রহগুলোর গতি-প্রকৃতি হিসেব করে বের করে ফেলতে পারি। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ছায়াপথ কিংবা ক্লাস্টাররা ঠিক কী বেগে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বলতে পারি, মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল ঠিক ১৪ বিলিয়ন বছর আগে! এমনকি, আমাদের পাঠানো মহাকাশযান পেরিয়ে গেছে সৌরজগতের সীমা, ছুটে চলেছে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাশূন্যের পথ ধরে।

হ্যাঁ, মহাবিশ্বের ৫/৬ ভাগ ভরের প্রকৃতি কিংবা এদের ব্যাপারে তেমন কিছু আমরা জানি না। কিন্তু ১৪ বিলিয়ন বছরের রহস্য, ইতিহাস বনাম মাত্র দু'শো বছর- এটুকু সময়ের মাঝে মাত্র ৩ পাউন্ডের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে আমরা যেটুকু জানি, সেটাই কি আমাদেরকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য যথেষ্ট না?
( শেষ )

*




0 Comments 454 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024