FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

জীবন টা বেদনার 🙄

জীবন টা বেদনার 🙄

*

মন মেজাজের অবস্থা তেমন একটা ভালোনা। মাসের ১০ তারিখ। কোন বাসা থেকেই এখনো পর্যন্ত টিউশনের বেতন দিলোনা। এর মধ্যে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত প্রায়। CGPA তেমন ভালোনা। CV দিলে ডাকেনা, ডাকলেও কি সব আকাশ পাতাল কোশ্চেন করে, আমিও আকাশ পাতাল চিন্তা করে উত্তর খুজে পাইনা। ছোট ভাই মজিবকে বললাম একটা ইন্টারভিউ আছে ২০০ টাকা দে।
'আপনারে ধার দেওয়া আর চিট ফান্ডে টাকা রাখা একিই কথা, টাকা ধার দিবোনা'। আমি এক বালতি কাপড় ভিজিয়েছি। কাপড় গুলো ধুইয়া দেন ২০০ টাকা দিবো।
মজিবের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম ও কি আসলেই আমার মায়ের পেটের আপন ভাই? আমার খটকা আছে। আম্মাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে রাস্তা থেকে আসলে কাকে কুড়িয়ে আনছে? আমাকে নাকি মজিবকে!
ধমক দিয়ে বললাম দিনদিন তো বেয়াদব হইতেছো। বড় ভাইরে বলো কাপড় ধুইয়া দিতে।
'ধুইয়া দিবেন কিনা বলেন! আমার কোচিং এ ক্লাস আছে। না হয় বের হয়ে যাবো'।
আমার আসলে এই মুহূর্তে টাকা ছাড়া গতি নাই। বললাম ধুয়ে দিবো ২০০ টাকা রেখে যা।
আসলে আম্মা এখন মজিবকে চাইতে না চাইতেই ভরপুর টাকা পয়সা দেয়। আমার গ্রাজুয়েশন শেষ তাই লজ্জায় টাকা চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আর মজিবের সামনে ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট, তার চাহিদা অনেক বেশী। কদর ও বেশী!
২০০ টাকা নিয়ে ইন্টারভিউ অফিসে পৌছালাম। ঢুকতেই একটা আকাশ পাতাল কোশ্চেন করলো।
'একটা বানর প্রতিদিন খুটি বেয়ে ৩ মিটার উঠতে পারে। রাতে ঘুমালে সে ২ মিটার নেমে যায়। তাহলে ৩০ মিটার উঠতে বানরটির কতদিন সময় লাগবে?'
আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। আসলাম ISP তে ইন্টারভিউ দিতে। কোথায় ইন্টারনেট রিলেটেড প্রশ্ন করবে না শুরুতেই বানর! অনেক চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দিলাম ৩০ দিন। মোটা ফ্রেমের যে ভদ্র লোক আমায় প্রশ্নটি করেছিলো সে মুখের উপর বললো গেট আউট। আমি দাঁড়িয়ে বললাম স্যার একটা কথা বলবো?
'হ্যা বলো'।
'হারামজাদা তুই গেট আউট, তর চোদ্দগুষ্টি গেট আউট'। আমি দৌড়ে বের হয়ে গেলাম। চাকরী না হোক। চাকরী নিয়ে আমার চিন্তা নাই। আসলে চাকরী আমার ভালো লাগেনা। আম্মাকে বলার জন্যই আমি শুধু শুধু ইন্টারভিউ দিতে যাই। দেখাই যে আমি খুব চেষ্টা করছি।
চশমা মোটা ব্যাটাকে গালি টা দিয়ে প্রেমিকা পাওয়ার মতো আনন্দ হচ্ছে। এই মুহূর্তে চা না হলে আমার জমবেনা। চা খাচ্ছি হঠাৎ এক লোক কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো ভাই একটা উপকার করবেন?
আমি বললাম মাফ করেন টাকা পয়সা নাই।
'ভাই ওরকম কিছুনা। আসলে আমার বিপদটা অন্য। বিয়ে করবো কোন সাক্ষী পাচ্ছিনা। সামনেই কাজী অফিস, আমার বিয়ের সাক্ষী হবেন?'
ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটা দেখতে সুন্দর, লম্বা, বডি ফিটনেস ও ভালো। আরেকটু ভালো করে বললে যেকোন মেয়েই ধপাস করে তার প্রেমে পড়ে যাবে।
বললাম হ্যা দিবো। চায়ের বিলটা দেন আর বিয়ে শেষে কাচ্চি খাওয়াবেন। রাজী আছেন?
'ভাই সব হবে আপনি আসেন'।

কাজী অফিসে বসে আছি। সাথে আরেকজন। তাকেও ছেলেটা রাস্তা থেকে ধরে এনেছে কিনা বুঝতেছিনা। কিন্তু যা বুঝলাম মেয়ে এখনো এসে পৌছায়নি। ছেলেটাকে একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি দোয়া করছি মেয়েটা যেন আসে। খুব ক্ষিদা পেয়েছে। মেয়ে না আসলে বিয়ে হবেনা আর কাচ্চিও খাওয়া হবেনা। এর মধ্যে ছেলেটাকে ৪-৫ বার বলে ফেলছি ভাই আপনি ফোন দেন, আসতেছেনা কেনো? জ্বলদি আসতে বলেন। আর মনে মনে ভাবছি না জানি কোন দোকানের বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!
একটুপর মেয়েটা আসলো। একতো বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে, দ্বিতীয়ত বিয়ে করবে। কিন্তু কোন টেনশন নেই। হাসতে হাসতে কাজী অফিসে এসেছে, হাসতে হাসতে চোখের পলকে তিনবার কবুল ও বলে ফেললো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া।
জিজ্ঞাসা করলাম আপনার কোন চিন্তা হচ্ছেনা?
মেয়ে যেন আমার চেয়ে বেশী অবাক হলো। কেনো চিন্তা হবে ভাইয়া?
'পালিয়ে এসে বিয়ে করেছেন চিন্তা হচ্ছেনা'?
মেয়েটি বললো পালিয়ে বিয়ে করেছি ঠিকিই। কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করিনি। বললাম মানে?
'মানে ছোট বেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিলো পালিয়ে বিয়ে করার৷ ফ্যামিলি আর পড়াশোনার চাপে প্রেম করে উঠতে পারিনি। তাই আব্বুর কাছে আবদার করেছি যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করবা তাকেই বিয়ে করবো। তোমরা তোমাদের আনুষ্ঠানিকতা করো কিন্তু বিয়েটা আমি ফিয়োন্সির সাথে কথা বলে পালিয়ে করবো। হুট করে, যেকোন দিন, কাউকে না জানিয়ে। আব্বু একটু অমত থাকলেও রাজি হলো। আর আজ দুজন মিলে পালিয়ে চলে আসলাম'।
আমি বললাম পালিয়ে আসলে তো মানুষ বাসায় যায়না। এদিক সেদিক কয়েক দিন থাকে। বাসা থেকে যা চুরি করে আনে তা ফুরিয়ে গেলে পরে বাসায় ঢু মারে। কিন্তু আপনারা তো বিয়ে করেই বাসায় চলে যাবেন। মেয়েটি চোখ বড় করে বললো, কি বলেন আপনি! মোটেও বাসায় যাবোনা। আমি আসলে আম্মুর সব গয়না চুরি করে নিয়ে এসেছি। ওগুলো সব বিক্রি করে দিবো। অবশ্য আমার জন্যেও আব্বু অনেক গয়না কিনেছিলো। কিন্তু নিজের গয়না নিয়ে আসলে পালিয়ে আসার ফিল পেতাম না। তাই আম্মুর গয়না নিয়ে এসেছি! ফোন অফ রেখেছি, কেউ ফোনে পাবেনা। সব টাকা পয়সা শেষ হলে তারপর বাসায় যাবো। এসব শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। বলে কি এই মেয়ে! হঠাৎ করে ছেলেটি আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে এলো।
'ভাইয়া আপনি প্রিয়শীর কথায় কিছু মনে নিবেন না। আসলে ব্যাপারটা আপনাকে বলি। ৬ মাস আগে আমাদের বিয়ে ঠিক হয় পারিবারিক ভাবে। কার্ড ছাপানো হয়ে গেলো, সবাইকে দাওয়াত দেওয়াও হয়ে গেলো। হুট করে ও আমায় ফোন দিয়ে বলে বিয়ে হবেনা। আমি কারন জিজ্ঞাসা করায় সে বললো, আপনি বিয়েটা আপাতত অফ রাখেন। আমি আর আপনি পালিয়ে বিয়ে করবো। আমার খুব ইচ্ছে পালিয়ে বিয়ে করার। ও আমায় কেমন করে সব বুঝিয়ে বলে। আমার কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলেও ভালো লেগেছিলো। কেমন যেন প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি সব আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ রাখলাম। গত ৬ মাসে আমাদের বিয়ের কথা প্রায় সবাই ভুলে যায়। গত রাতে প্রিয়শী আমায় ফোন দিয়ে বললো কাল আমরা বিয়ে করবো। তুমি কোন টাকা পয়সা সাথে আনবানা। ১ টাকাও না। ধরে নিবা তুমি বেকার, তোমার কোন চাকরি নেই। পায়ে হেটে কাজী অফিসে আসবা। আমি যা নিয়ে আসবো তা দিয়ে আমরা খরচ করবো। ভাইয়া বুঝেছেন?'
আমি বুঝেছি টাইপ মাথা নাড়ালাম। সবকিছু শুনে আমার দুই ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। এক, এই শহরে ধান্দার যেমন অভাব নাই তেমন ফন্দিরও অভাব নাই। বিপদে ফেলে ব্ল্যাক মেইল করে টাকা আদায় করা বা ছিনতাই করার এটা কোন অভিনব কৌশল কিনা বুঝতেছিনা। দুই, মানুষ তো স্বপ্ন আর ইচ্ছের পিছনেই ছুটে। এই স্বপ্ন আর ইচ্ছে গুলো একেকজন একেক ভাবে সাজায়। চিন্তার ভিন্নতার কারনে গল্প গুলো ভিন্ন হয়। ধরে নিলাম সবকিছু সত্য, তাদের এ গল্পটা সুন্দর, ভিন্ন আর ইউনিক।
হুট করে প্রিয়শী বাইরে এসে ছেলেটাকে ধমক দিয়ে বললো, ইতমাম কিছু না বলে বাহিরে চলে আসছো কেনো? আর ভাইয়া আপনার নামটা যেন কি?
আমি উত্তর দিলাম 'সজিব'।
'সজিব ভাইয়া আমাদের সাথে আরেকটু থাকবেন প্লিজ? একটা জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে গহনা গুলো বিক্রি করবো। তারপর আর একটা কাজ আছে। আপনি থাকলে খুব উপকার হতো'। মেয়েটা এত সাবলীল ভাবে আমার সাথে কথা বলছে যেন আমি তার আপন মায়ের পেটের ভাই না হলেও খুব কাছাকাছি গোত্রের কোন ভাই।
আমি তাদের সাথে গেলাম। রাস্তার পাশে দোকান।হটাৎ মনে হলো আমার দোকানে যাওয়া ঠিক হবেনা। কোন বিপদ কোন দিয়ে আসে কে জানে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের দোকানে পাঠালাম।
এর মধ্যে মজিব ফোন দিলো।
'ভাইয়া ২০০ টাকা দিলাম কাপড় গুলা তো ধুয়ে দিলেন না'।
আমি বললাম শোন,
'একটা বানর প্রতিদিন খুটি বেয়ে ৩ মিটার উঠতে পারে। রাতে ঘুমালে সে ২ মিটার নেমে যায়। তাহলে ৩০ মিটার উঠতে বানরটির কতদিন সময় লাগবে?'
এটার উত্তরটা যদি তুই পারোছ তাইলে আমি এসেই তর কাপড় গুলা ধুয়ে দিবো।
কিছু না বলেই মজিব ফোন কেটে দিলো।
প্রিয়শী আর ইতমামও চলে আসলো। তারা খুব হাসিখুশী। প্রিয়শী বললো, ভাইয়া চলেন না একটা কাজ করি? আমার ইচ্ছে ১০০ জন মানুষ খাওয়াবো। যারা হবে পথ শিশু, দরিদ্র কিংবা খেটে খাওয়া মানুষ।
তিনজন মিলে প্রায় ৪২ জন পথশিশু খুঁজে বের করলাম আর ২৮ জন রিক্সাওয়ালা। প্রিয়শী এর মধ্যে একটা খাওয়ার হোটেল ঠিক করে ফেললো। ৭০ জন আর আমরা তিনজন একটা হোটেলে এসেছি। একসাথে এত গুলো মানুষকে খেতে বসতে দেখার পর আমার এটাকে আর হোটেল মনে হচ্ছেনা। কমিউনিটি সেন্টার মনে হচ্ছে। কোন লাইটিং নেই, ডেকোরেশন নেই, বিয়েতে বাজানো হয় টাইপ মিউজিক নেই তবুও প্রতিটা বাচ্চা আর খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর তৃপ্ততার হাসি গুলো যেন আমার দেখা সব অনুষ্ঠানকে ম্লান করে দিচ্ছে। বোরহানিটা ভালো হয়নাই, ঝোলে ঝাল বেশী বা রোস্টটা ভালো না টাইপ কোন অভিযোগ নেই। তারা শুধু খাচ্ছে। খাইতে দেখার দৃশ্যও যে এতোটা স্বর্গীয় হতে পারে আমি কখনো চিন্তা করতে পারিনি। একটা বিষয় খেয়াল করলাম। ইতমাম ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে প্রিয়শীকে দেখে যাচ্ছে। সে এখন প্রেমিকের রোল প্লে করবে নাকি স্বামীর রুল প্লে করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। তার চেহারায় এ দোটানার ছাপ স্পষ্ট হলেও মুগ্ধতার ব্যাপারটা জ্বলজ্বল করছে। দেখলাম আমার জন্য কাচ্চি-ই আনা হয়েছে। আসলে মন ভরে গেলে পেটের ক্ষিদাটা থাকেনা। আমি খাইতে পারিনি তেমন। নব দম্পত্তির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এসেছি। আমি শিখেছি জীবনটা উপভোগ্য। হয়তো কল্প রাজ্যের রুপকথার গল্পের চেয়েও বেশী। আমরা চাকচিক্যের মোহে পরে সাধারণতা ভুলে যাই। অথচ এ সাধারণ ব্যাপার গুলোই কত অসাধারণ গল্প হয়, অনুভূতির দিক দিয়ে রুপকথাকেও হার মানায়!

আমি হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছি। সমস্যা হচ্ছে খাবার ছেড়ে চলে আসলেই ক্ষিদা বেড়ে যায়। আমার ক্ষিদা পেয়েছে আবার ঘুমও পাচ্ছে। বাসায় এসে দেখি রুম তালা দেওয়া। এসময়ে মজিবের বাসায় থাকার কথা। মজিব নিজের কাপড় ধুয়ে ফেলেছে দেখে ভালো লাগছে। কিন্তু চোখে চিরিক লেগে গেলো টেবিলের উপর একটা চিরকুট দেখে।
'ভাইয়া আপনারে যে ২০০ টাকা দিলাম তা তো আর পাবোনা। তাই কাপড় ধোয়ার বদলা কাপড় ধোয়া দিয়েই নিলাম। আপনার যত কাপড় আছে সব বাথরুমে বালতিতে ভিজিয়ে রেখেছি। আপনার ধুয়ে রাখা কাপড় ও ভিজিয়ে ফেলেছি। কষ্ট করে ধুয়ে নিবেন। আর পিটানোর জন্য আমাকে খোঁজে লাভ নাই, আমি বাড়ি চলে যাইতেছি!'
চিরকুট পড়ে দৌড়ে বাথরুমে গেলাম। আসলেই আমার সব কাপড় ভিজানো। যেগুলো বালতিতে আটেনি সেগুলো গামলাতে ভিজানো!
বউ তালাকের মতো ভাই তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আমি এখনি মজিবকে তিন তালাক বলে দিতাম।
কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আমার ভিতরটা হু হু করে কেদে উঠলো। এখন আমাকে এতগুলো কাপড় ধুইতে হবে? উফফ! জীবনটা বেদনার!
★★
Collected

*




14 Comments 1326 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024