FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

হাড়িয়ে চলার চেনা পথ

হাড়িয়ে চলার চেনা পথ

*

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সুমধুর গলায় চিৎকার করা “ক্যানভাসারদের” আমরা কে না চিনি? তাদের কাজটা মূলত কী? ছোটোখাটো বিভিন্ন রোগ থেকে শুরু করে বড়সড় সব ধরণের রোগের অয়েন্টমেন্ট, ট্যাবলেট, সিরাপ ইত্যাদি বিক্রি করে। ভীড় যে খুব একটা হয় না, তা ঠিক নয়। সবাই বেশ করে মজা করেই তার কথা শুনে। কিন্তু, খুব কম মানুষই তা কিনে বাড়ি ফেরে। কারণ? সবাই জানে সেই ক্যানভাসারের নেই কোন ডাক্তারি সার্টিফিকেইট, তার ওষুধের নেই কোন গ্যারান্টি।
.
এবার অন্য কথায় আসি। যারা মঞ্চ বা টিভি নাটকে কিংবা বড় পর্দায় দেশে বিদেশে অভিনয় করছেন — তাদের মূল কাজটা কী? ডিরেক্টর একটা স্ক্রিপ্ট দেয়। সেটার সাথে আবেগ, রাগ, ভালোবাসা মিশিয়ে তা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা। এই তো?
.
একজন খেলোয়াড়। কাজটা কী তার? কাঠের বা চামড়ার একটা বল নিয়ে নব্বই মিনিট, তিন ঘন্টা, সীমিত একটা ওভার অথবা দিন কয়েক শারীরিক কসরত করেন। অলিম্পিকে অবশ্য আরো অনেক ক্যাটাগরির গেইমস আছে। কিন্তু, মূল কাজটা হল শারীরিক কসরত দেখানো, নিজেদের মধ্যে সাময়িক সময় প্রতিযোগিতা করা এবং স্টেডিয়াম কিংবা টিভি সেটের সামনে বাসায় বা দোকানের বাহিরে দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো কে আনন্দ দেওয়া।
.
একজন বিজ্ঞানী। অথবা সাইয়েন্স ফিকশানের লেখক। তিনি কি করেন? বিজ্ঞানের কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব ভালোমত পড়াশুনা করেন। তারপর সেখান থেকে কিছু নিয়ে আর নিজের মনের কল্পকাহিনী মিশিয়ে সাইয়েন্স ফিকশান লিখেন। এজন্য এটা ফিকশান। ফ্যাক্ট নয়।
.
এভাবে নিজের অজান্তে আমরা এই মানুষগুলোকে আমরা ভালোবেসে ফেলি। তাদের নাটক আমাদের ভালো লাগে, সিনেমা রিলিজ হলে সবার আগে হলে গিয়ে দেখে আসি, নতুন মিউজিক ভিডিও আসলে ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করি, একটা অটোগ্রাফ/ সেলফি তোলার জন্য পাগলের মত হয়ে থাকি, নতুন কোন বই বের হলে অনলাইনে প্রি-অর্ডার করে ফেলি যাতে খুব সহজে বইটা পেয়ে যাই। আমরা এই মানুষগুলোকে একটা সময় ব্যক্তিগত জীবনে বাম হাত প্রবেশ করানোর সুযোগও দিয়ে দিই।
.
আমরা বিশ্বাস করি না যে রাস্তার সেই ক্যানভাসারের সস্তা ওষুধ আমাদের রোগ সারাতে পারবে। আমরা জানি, সে যা বলছে তা মিথ্যে। তার দুটো পয়সা রোজগার হবে বলে আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওসব ছাইপাশ কিনি না।
.
তবে এই নায়ক- নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, ক্ষুধে বিজ্ঞানমনস্ক লেখকগণ যখন আমাদের “মুসলিম” হিসেবে কী করা লাগবে, কী করা লাগবে না তার মানদন্ড ঠিক করে দেন- আমরা চট করে তা মেনে নেই। আমরা খুব ভালো করে জানি যে — এই মানুষগুলো নিজেরা সারাদিন মিথ্যা কথা, মাদক, মেয়ে ইত্যাদিতে ডুবে আছে। সালাতের কোন খবর নেই। রমজানে সেহরি পার্টিও করে, দুপুরে লাঞ্চও করে, বিকেলে ইফতার করে আবার সারাদিন ঈদের নাটক/ সিনেমার শুটিংও করে। আমরা তাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিই আল্লাহ কী বলেছেন ইসলাম সম্বন্ধে।
.
যে মানুষটা নিজে ইসলামের ধারে কাছে নেই, সে বলছে “কুর’আনে এমন কথা কোথাও লিখা নেই”। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভাঁড়ামিপূর্ণ কৌতুক!
.
একটা প্রাসঙ্গিক উদাহরণে যাই-
.
“মেয়েদের পোশাকের দোষ না দিয়ে নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করুন”- খুব পরিচিত কথা। কখন শুনি? যেকোন রেইপের পরে। ইদানীং বেশি শোনা হচ্ছে। কারা বলছেন? সেলিব্রিটি নায়কেরা- যারা নিজেরা তাদের নাটক, সিনেমাতে “ইভ টিজিং” এর দৃশ্যে অভিনয় করছেন খুব পারঙ্গমতার সাথে। ভিলেইনরা ধর্ষণের দৃশ্য চিত্রায়নে সাহায্য করছেন। “চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে”? / “বাসন্তী রঙ শাড়ি পড়ে ললনারা হেটে যায়। ঐ বখাটে ছেলেদের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই। মেলায় যাই রে মেলায় যাই রে”! গানের কথায় তাল মেলানো মানুষগুলো আমাদের বলছে “মেয়েদের সম্মান করতে শেখ, বেয়াদব কোথাকার! ঘরে মা – বোন নেই”?
.
এই কথাগুলো আমরা শুনছি এমন মানুষদের কাছে যাদের ইদানীং নিয়মিত ভিত্তিতে নারী কেলেংকারির ঘটনা খবরের কাগজে বেরুচ্ছে। সহকর্মী মহিলা থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে কেউই বাদ যাচ্ছে না। তারা বলছে ছেলেদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে! খুব অদ্ভুত- তাই না?
.
অনেক সেলিব্রিটি নায়িকারাও ফেইসবুকে লাইভে এসে, টক- শো তে এসে, খবরের কাগজে সম্পাদকীয়তে এসে বলছে, “পোশাকের দিকে কেন তাকাবেন? তবে ৫ বছরের যেই কন্যাশিশু রেইপড হচ্ছে তার ব্যাপারে কী বলবেন?” খুব ন্যায্য কথা। ৫ বছরের কন্যাশিশু যে রেইপড হচ্ছে, সেই নিষ্পাপ মেয়ে সন্তানের যে এমন হাল করেছে তাকে অবশ্যই প্রকাশ্যে চাবুক মেরে পিঠের চামড়া তুলে ফেলা উচিৎ কিংবা মেরে ফেলা উচিৎ পাথর মেরে। এজন্যে অবশ্যই শরীয়াহ আইন দরকার (যদিও এরা শরীয়াহ ‘ল চান না; কারণ একটা ক্ষেত্রে তারা পছন্দের বিচার পেলেও অধিকাংশক্ষেত্রে তাদের নফসের বিপক্ষে যাবে সমস্ত হুকুম)।
.
বাই দ্য ওয়ে, আমরা কাদের মুখে এসব নীতিকথা শুনছি? যারা হলিউডের #MeToo campaign এর নায়িকাদেরই অন্ধ ফলোয়ার। যেখানে উপরে উঠতে গিয়ে ডিরেক্টর, প্রোডিউসার, এক্টর সবাইকে খুশি করে আসতে হয়েছিল স্বেচ্ছায়, আর এখন “আমিও আছি এই দলে” নামক ক্যাম্পেইন করে মিছে ভিক্টিম সেজে করুণা ভিক্ষের নাটক করা।
.
.
এই জায়গায় এসে কথার দ্ব্যার্থক কথা না বললে ভালো হয়। ছেলেদের মানসিকতা অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার, তবে একই সাথে সব ধরণের অশ্লীল কার্যকলাপের সহজলভ্যতাও বন্ধ করতে হবে।
.
.
একজনের অভিনয় ভালো, মাঠে ভালো খেলে, গানের গলা ভালো, নাসা (NASA) তে চাকুরি করে এসেছে- এর কোনটাই ইসলামী হুকুম নেওয়ার মানদন্ড না, হতে পারে না। মানুষ ম’রে যাওয়ার আগে ধন- দৌলত রেখে যায়। আল্লাহর রাসুল (সা) রেখে গিয়েছেন কুর’আন এবং সুন্নাহ। এর বেশি কিছু লাগলে সেগুলো নিশ্চয় দিয়ে যেতেন।
.
যেহেতু আর কিছু দিয়ে যান নি, আমাদের সামনে কুর’আন এবং সুন্নাহকে ঠিক রেখে জীবনপদ্ধতি সেভাবে ডানে- বামে এডজাস্ট করে ঠিক করা লাগবে। এর বিপরীতটা নয়, যা ইদানীং আমরা করছি।
.
যদি কেউ মনে করে যে- সে এমন মানুষকে জীবনে অনুসরণ করবে, এমন মানুষের কাছে আল্লাহ, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা শুনবে যাদের নিজেদের অবস্থাই বেগতিক তাহলে তাদের সাথে তার হাশর হবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
.
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ ডা. সাঈদ (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

*




3 Comments 555 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024