এখন বর্ষাকাল,তাই মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।সকাল থেকেই রোদ,বৃষ্টির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই কিন্তু যখন শিশির কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো ঠিক তখনি বৃষ্টি শুরু।
এই বৃষ্টির দিনে রিক্সা পাওয়া খুব কষ্টের।৫ মিনিট বৃষ্টিতে ভেজার পর শিশির একটা রিক্সার দেখা পেলো।এই রিক্সা যাবেন?রিক্সাওয়ালা দাড়ালো না,শিশিরের খুব বিরক্তি লাগলো।রিক্সার দিকে তাকিয়ে সে এক কাল্পনিক অনুভূতি অনুভব করলো।দেখলো একটা মেয়ে, রিক্সা তে পর্দা দেওয়া ছিলো তাই ভালো করে দেখতে পারলো না।চশমা পরা এইটুকু বুঝতে পারলো।হয়তো খুব সুন্দর,যাই হোক তার এমন অনুভূতি কোনদিন হয় নি।
মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে দেখলো সে অনেকক্ষণ ভিজেছে,তার মনেই ছিলো না।এই অবস্থাই আর কলেজে যেতে পারলো না,বাসায় ফিরে গেল।পরের দিন আর বৃষ্টি হলো না।পরের দিন শিশির কলেজে গেলো।কলেজে একাকী বসে ছিলো।পিছন থেকে হাসির আওয়াজ।দেখলো একটা মেয়ে চোখে চশমা।
শিশিরঃ এভাবে হাসছেন কেন? মেয়েটাঃ জ্বর এসেছে? শিশিরঃ মানে? মেয়েটাঃ কাল রিক্সা তে আমি ছিলাম।আপনি ঐভাবে তাকাচ্ছিলেন কেন? শিশিরঃ বুঝতে পেরেছি।আপনি কানা তো তাই আপনাকে দেখছিলাম।(হাসতে হাসতে)
মেয়েটাঃআপনি তো মানুষকে হাসাতে পারেন। শিশিরঃআমি তো আপনাকে রাগালাম আর আপনি বললেন হাসালাম। মেয়েটাঃ এসব কিছু নির্ভর করে আমাদের মন মানসিকতার উপর।এইসব কথা কেউ বললে আমি হাসি।
শিশিরঃআপনি অদ্ভুত তো। মেয়েটাঃআচ্ছা আপনি কি ফার্স্ট ইয়ার ? শিশিরঃহুম।আপনি? মেয়েটাঃআমি ও তো।কিন্তু আমি আপনাকে চিনি না কেন? শিশিরঃমাসে একদিন আসি তো তাই।আপনার নাম কি? মেয়েটাঃ স্নেহা।আপনার নাম কি? শিশিরঃআমার নাম শিশির।আপনাকে তুমি করে বলা যাবে? স্নেহাঃআমি ও এটাই বলতে যাচ্ছিলাম।তুমি করে বলো। শিশিরঃঠিক আছে।
১ দিনেই দুইজন ভালো বন্ধু হয়ে গেল।অনেকদিন পর আবার শিশির কলেজে গেল।কলেজে আসতেই ভেক্টর স্যার শিশির কে ডাকলো।স্যারের নাম শিমুল।কিন্তু সবাই ভেক্টর বলে ডাকে।ভেক্টর খুব ভালো বোঝাতে পারে তাই।
ভেক্টর স্যারঃকলেজে আসো না কেন? শিশিরঃএকটু অসুস্থ ছিলাম। ভেক্টর স্যারঃপ্রতিবার এই কথায় বলো।আমি ভাবছি তোমাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেব না। শিশিরঃসব স্যার যদি আপনার মতো ক্লাস নিতো তাহলে স্যার প্রতিদিন আসতাম।আপনি কোন কিছু একবার বুঝিয়ে দিলে ঘুমিয়ে থেকে ও সেটা ঘুমের মধ্যে চর্চা করা যায়। ভেক্টর স্যারঃএটা অবশ্য ঠিক বলেছ।(হাসি মুখে) শিশিরঃআমি পরীক্ষা দিতে পারবো? ভেক্টর স্যারঃঅবশ্যই।অসুস্থ থাকলে আর কি করার।তুমি এখন যেতে পার।
শিশির সব স্যারকে এইভাবে অয়েল দেয়।তাই স্যারদের খুবই প্রিয়।ভেক্টর স্যারকে অয়েল দিলে স্যার অনেক সময় অনেক কিছু gift ও করে।স্নেহা স্যার আর শিশিরের সব কথা শুনেছে। স্নেহাঃতুমি তো স্যারকে ও হাসাতে পারো। শিশিরঃতাই। স্নেহাঃহুম।এই কয়দিন তোমাকে অনেক মিস করছিলাম। শিশিরঃআমি ও তোমাকে অনেক মিস করছিলাম। স্নেহাঃমিথ্যা কথা। শিশিরঃ কি করে জানলে? স্নেহাঃমিস করলে তুমি কলেজে আসতে। শিশিরঃবুদ্ধি আছে তো তোমার।
স্নেহাঃ হয়তো একটু আছে।আমরা বাসা চেঞ্জ করেছি। শিশিরঃএই কথা আমাকে বলছ কেন? স্নেহাঃতোমার পাশের বাসায় তো তাই। শিশিরঃভালো তো। স্নেহাঃএখন থেকে একসাথে কলেজে যাবো।আপত্তি আছে? শিশিরঃনা,আপত্তি থাকবে কেন।তোমার আম্মু যদি কিছু বলে? স্নেহাঃআমার আম্মু ছোটবেলায় মারা গিয়েছে।আর আব্বু খুব ফ্রেন্ডলি .. শিশিরঃদুঃখিত।আমি জানতাম না যে তোমার আম্মু আর নেই। স্নেহাঃঠিক আছে।পরে কথা হবে। এখন স্নেহা আর শিশির একসাথে কলেজে যায়।শিশিরের বন্ধু বলতে স্নেহাই আছে।শিশির স্কুল লাইফে সিলেটে থাকতো।ওখানে অনেক বন্ধু ছিলো।আর এখন যশোরে থাকে।স্নেহার ও এক ই অবস্থা।স্কুল লাইফে ঢাকায় থাকতো।আর কলেজ লাইফ যশোরে।শিশিরের এখন ভাবতে ও অবাক লাগে এই মেয়েকে দেখেই একদিন শিশির ক্রাশ খেয়েছিলো।কারণ স্নেহা শিশিরের শুধুই বন্ধু।এর বেশি কিছু না।
দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসলো।কলেজ ও ছুটি।ঈদের দিন সকাল ৬ টার সময় স্নেহা আসলো।এর আগে শিশির অনেকবার স্নেহাদের বাসায় গিয়েছে।স্নেহার বাবার সাথে দাবা ও খেলেছে।স্নেহাকে আসতে বলেছে কিন্তু স্নেহা আসে নি। শিশিরঃকি মনে করে? স্নেহাঃকেন তোমার বাসায় আমার আসা কি নিষেধ? শিশিরঃনা। স্নেহাঃএকটা রিকুয়েষ্ট শিশিরঃকি? স্নেহাঃআজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবা। শিশিরঃমাথা খারাপ? স্নেহাঃঘুরতে গেলে সমস্যা কোথায়? শিশিরঃআমি সারা বছর ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না।স্যারদের কাছে পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে যায়।রাতে না পড়লে আম্মুর অভিমান।ঈদের দিন আমি নামাজ পড়ে আসার পর একটানা অনেকক্ষণ ঘুমায়।
স্নেহাঃকালকে ঘুমিও।আজ ঘুমাতে দেব না। শিশিরঃআমি ঘুমাবো। তারপর স্নেহা শিশিরের আম্মু কে নালিশ করলো।কি আর করার।নামাজ পড়ে এসে স্নেহাকে নিয়ে ঘুরতে গেলো।বাসায় ফেরার পথে দুইজন আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে।শিশিরের একটা খেয়ে দাঁত ব্যথা শুরু হয়।স্নেহা ৩ টা নিয়েছিলো।দুইটা খাওয়ার পর আরেকটা শিশিরের মাথায় ফেললো। শিশিরঃতোমার সাথে যদি আর কোনদিন ঘুরতে আসি তবে আমার নাম চেঞ্জ করবো। স্নেহাঃতুমি আমার সব থেকে ভালো বন্ধু।তোমার সাথে যদি একটু মজা না করি তাহলে কার সাথে করবো।তাও ঈদের দিন।অন্য দিন হলে করতাম না। শিশিরঃঠিক আছে।একটা কথা বলবো? স্নেহাঃবলো। শিশিরঃতোমাকে তুই বলতে পারবো? স্নেহাঃনা।আমাকে তুই করে শুধু আমার বাবা বলে।এই অধিকারটা আমি আর কাওকে দিতে চাই না।
শিশিরঃঠিক আছে পাগলি। স্নেহাঃহুম। অন্যবার ঈদ মানেই ঘুম।আর এবার সারাদিন ঘুরতে হলো।কিন্তু এবারের ঈদটাই শিশিরের কাছে বেস্ট...দেখতে দেখতে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে আসলো।দুইজন ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।সাবজেক্ট ও এক।এখন ও দুইজন বেস্ট ফ্রেন্ড ...স্নেহা ওর খালার বাসায় থাকে আর শিশিরের বাবা ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ায় ও ওর বাবা মার সাথেই থাকে।মাঝে মাঝে স্নেহা শিশিরদের বাসায় আসে।আজ বিকালে এসেছে স্নেহাঃকাল আমার জন্মদিন। শিশিরঃতো স্নেহাঃআমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবা। শিশিরঃকাল পারবো না। স্নেহাঃকেন? শিশিরঃঘুমাবো। স্নেহাঃ ঘুমালে তোমার মাথায় গরম পানি ঢেলে দেব। শিশিরঃঠিক আছে।
পরের দিন দুইজন অনেক ঘুরলো।এবার ও স্নেহা ফেরার পথে শিশিরের মাথায় আইসক্রিম লাগিয়ে দেয়।দেখতে দেখতে একটা সময় ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে যায়।হঠাৎ করেই স্নেহার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।শিশির তো অনেক খুশি।তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে।আবার কষ্ট ও পাচ্ছে।আর তো আগের মতো কথা হবে না।এই প্রথম দুইদিন স্নেহার সাথে কথা হলো না।এতোদিন এরা কেউ বুঝতে পারে নি যে এরা দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে ফেলেছে।পরশুদিন স্নেহার বিয়ে।শিশির সব কাজ ঠিক ভাবে করছে।স্নেহা শিশিরকে ফোন দিলো স্নেহাঃআজ কিছু কথা বলবো। শিশিরঃকখন? স্নেহাঃসন্ধ্যার সময় আমার সাথে দেখা করবা। শিশিরঃঠিক আছে।
সন্ধ্যার সময় স্নেহার সাথে দেখা করলো। স্নেহাঃআমি আজ যে কথাগুলো বলবো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।শিশির কাল আমার বিয়ে।কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে। শিশিরঃঅভ্যাস হয়ে যাবে। স্নেহাঃআমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। শিশিরঃআমি ও। স্নেহাঃআমি তোমার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। শিশিরঃসম্ভব না। স্নেহাঃকেন? শিশিরঃকাল তোমার অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে।এখন চাইলে ও আর কিছু করার নেই। স্নেহাঃবাবাকে বলবো? শিশিরঃতোমার বাবা অপমানিত হবে।যে মানুষটা তোমাকে এতো ভালোবাসে তার অপমান তুমি সহ্য করতে পারবা?তোমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসে তোমার বাবা।তার ভালোবাসাকে অপমান করার অধিকার তোমার নেই।
স্নেহাঃতুমি সত্যি অনেক ভালো।তোমার মতো ফ্রেন্ড হাজারে একটা খুজে পাওয়া যাবে না।(কাদতে কাদতে) শিশিরঃআরেকটা কথা। স্নেহাঃবলো। শিশিরঃবন্ধুত্ব সারাজীবনের আর ভালোবাসা আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে।আমি আমার বন্ধুকে হারাতে চাই না।তাই যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করো।
স্নেহাঃযদি একটু আগে বুঝতে পারতাম যে তোমাকে ভালোবাসি তাহলে সারাজীবন একসাথে থাকতে পারতাম। শিশিরঃভালো থেকো। স্নেহাঃতুই ও ভালো থাকিস।তুই ও এখন থেকে আমাকে তুই বলবি। শিশির চলে যাওয়ার পর অনেক কাদলো।এ সুখের কান্না।কারণ স্নেহা তাকে তুই বলার অধিকার দিয়েছে। স্নেহার বিয়েতে অনেক বৃষ্টি হলো।স্নেহা যখন চলে গেলো, সেই প্রথম যেভাবে শিশির ক্রাশ খেয়েছিলো আজ ও সেইভাবেই বৃষ্টির মাঝে স্নেহাকে দেখে ক্রাশ খেলো।
Posted By: Uposonghar
Post ID: 4049
Posted on: 4 years 7 months ago
Authorized by: HiRA