FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

ক্রিকেট সাগরে সব দুঃসাহসী দের গল্প

ক্রিকেট সাগরে সব দুঃসাহসী দের গল্প



গতকাল ৯উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তামিমের ভাঙা কব্জিতে মাঠে নামা, একহাতে খেলা আমাদের আবেগকে ছুঁয়ে গেছে, তাঁর উপস্থিতি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল বহুগুণ।
বিশ্ব ক্রিকেট এর আগেও এমন সাহসীদের দেখেছে, যারা দলের প্রয়োজনে নিজের শারীরিক কষ্টকে পাত্তাই দিতে চাননি। তামিম সেই তালিকার নবীনতম সংযোজন।

তবে হয়তো কেউ দলের প্রয়োজন মেটাতে পেরেছেন, কেউ পারেননি। গতকাল যেমন তামিম বিজয়ীর বেশে ফিরেছেন, তাঁর উপস্থিতিই মুশফিকের জন্য যথেষ্ট ছিল দলের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে, কিন্তু অনেকেই এরকম পরিস্থিতিও পাননি।
ঘুরে আসি সেইসব দুঃসাহসীদের গল্পে।

১)বার্ট সাটক্লিফ(নিউজিল্যান্ড), বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৫৪:
একটি বাউন্সারে মাথায় আঘাত অজ্ঞান হয়ে পেয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর, আবারো হেলমেট ছাড়াই ওরকম পিচে দুনিয়া উলটে গেলেও নিশ্চয়ই আরেকবার নামতে চাইবেন না?
কিন্তু এ কাজটাই দলের প্রয়োজনে করেছিলেন বার্ট সাটক্লিফ।
তীব্র এক বাউন্সার মাথায় আঘাত হানলে ব্ল্যাকআউট হয়ে ততক্ষণাত মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সবাই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে দেখা গেল, এক্সরেতে কোন ফ্র্যাকচার ধরা পড়েনি, কিন্তু সেই বাউন্সার তাঁর কানের পিছনে আঘাত করায়, কান দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে তিনি কানে কম শুনতে লাগলেন, যা কখনো আর সারেনি। ডাক্তার তাঁর ক্রিকেট খেলা চিরতরে বন্ধ করতে বলেন, এবং আপাতত কমপ্লিট বেডরেস্টের পরামর্শ দেন। ওদিকে মাঠে তাঁর দল নিউজিল্যান্ড আছে বিপদে, ৩য় ইনিংসে ব্যাট করছে ফলোওনে পড়ে। সাটক্লিফ খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে সোজা গেলেন মাঠে। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ১১নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে পড়েন ক্রিজে। খেলেন ৮০রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
ম্যাচটা প্রোটিয়ারাই জিতে নিয়েছিল, তবু সাটক্লিফের এই সাহসিকতার জন্য সেই ইনিংসটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
২)রিক মককস্টার(অস্ট্রেলিয়া), বনাম ইংল্যান্ড, ১৯৭৭:
ইংলিশ বোলার বব উইলসের বাউন্সারে তাঁর বা গালের চাপা ভেঙে যায়, মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। সে ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৩৮রানে অলআউট হলেও ডেনিস লিলি ও অস্ট্রেলিয়ান আগ্রাসী বোলিং লাইনআপ ইংলিশদেরও ৯৫রানে গুটিয়ে দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৫৩রানে অস্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন লিলি আউট হন, অস্ট্রেলিয়ান থিংক ট্যাংকের দুশ্চিন্তা তখনো কমেনি, ভাঙা চাপা নিয়ে প্লাস্টার মুখে জড়িয়ে নেমে পড়েন রিক মককস্টার। ৬৮বল খেলে ২৫রান যোগ করেন নিজে, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ছিল রডনি মার্শকে সঙ্গ দেয়া। দুইজনে স্কোরটাকে ৪১৯এ নিয়ে যান, এবং ইংল্যান্ডকে ৪৬৩রানের টার্গেট দেয়। এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৫৩রানের জয় পায়। এবং এর জন্য মককস্টারের অবদান অসামান্য। তাদের জুটিটা না হলে এই টার্গেট দেয়াই যেত না।
৩)ম্যালকম মার্শাল(ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বনাম ইংল্যান্ড, ১৯৮৪ :
তামিমের মতই তিরিশ বছর আগে শারীরিক সাময়িক পঙ্গুত্বকে থোড়াই কেয়ার করে ভাঙা কবজি নিয়ে ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে টেস্টে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েছিলেন এক লিজেন্ড ক্যারিবিয়ান। দলের বিপর‍্যয়ে নয় বটে, লিড নিয়ে দল বেশ ভাল অবস্থানেই ছিল। কিন্তু সতীর্থর সেঞ্চুরি তিনি থাকতে উইকেটের অভাবে মিস হবে, এটা তাঁর হজম হচ্ছিল না। নবম উইকেট পড়া মাত্রই তাঁকে দেখা গেল প্যাডগ্লাভস পড়ে নেমে আসতে। তিনি ক্যারিবিয়ান বোলিং ত্রাস ম্যালকম মার্শাল। ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাট দুই হাতে ধরেছিলেন বটে, কিন্তু ইঞ্জুরড হাতে শট নেবার সাহস করলেন না।
বিশ্বক্রিকেট প্রথমবারের মত দেখল, এক হাতে ব্যাটিং করা। আনাড়ি হাতে এই চমকপ্রদ কাজে ইংলিশ ফিল্ডার, বোলাররা না পেরে হেসেই ফেলেছিল, ফুর্তিবাজ মানুষটিও তাদের সাথেসাথে মিটিমিটি হাসতে শুরু করলেন নিজের কীর্তি নিয়ে।
এক হাতে খেলে একটি বাউন্ডারিও হাকিয়ে ফেললেন! তাই আত্মবিশ্বাসে ইঞ্জুরড হাত ব্যবহার না করেই একহাতে খেলতে লাগলেন, কিন্তু গুড লেন্থে ইনসুইং করা বলে স্লিপে ক্যাচ দিতেই হল তাঁকে, কিন্তু এরমধ্যে কাজ হাসিল হয়ে গেছে, গোমস আদায় করে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি।
কিন্তু ঘটনা তখনো আরো ঘটার বাকি ছিল, ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা অবাক হয়ে দেখল, মার্শাল ওতেই থামেননি, গারনারের সাথে উদ্বোধনী বোলিং আক্রমণেও আছেন মার্শাল!
এক হাতে বোলিং করে সাত উইকেট নিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে থামেন এই ক্যারিবিয়ান লিজেন্ড।
৪)অনীল কুম্বলে(ভারত), বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৪:
ব্যাটিং করতে নেমে বাঁ গালের চাপা ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। লেগস্পিন করতে যে পরিমাণ শারিরীক চাপ পড়ে, এ অবস্থায় বোলিং অসম্ভব। কিন্তু খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিপক্ষের ব্রেকথ্রু না আসায় অধৈর্য হয়ে, গাঙ্গুলীর অসহায়ত্ব দেখে মাঠে নেমে পড়েন কুম্বলে। সারামুখ, মাথা মুড়ানো ব্যান্ডেজ নিয়েই একের পর এক ডেলিভারি করতে থাকেন। তুলে নেন ব্রায়ান লারার মূল্যবান উইকেট।
৫)গ্রায়েম স্মিথ(দক্ষিণ আফ্রিকা), বনাম অস্ট্রেলিয়া,২০০৪:
স্মিথই হয়তো কাল তামিমের কীর্তিটা সবচেয়ে ভাল অনুভব করতে পারবেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৭৬রানের টার্গেটে চতুর্থ ইনিংসে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। মিচেল জনসনের আচমকা এক শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়, পরবর্তীতে ভাঙা আঙ্গুলে পড়ে প্লাস্টার।
সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার উপায় থাকল না , কিন্তু ২৫৭রানে প্রোটিয়ারা যখন নবম উইকেট হারালো, পঞ্চম দিনের বিকেল গড়িয়েছে। খুব বেশিক্ষণ বাকি ছিল না খেলা শেষ হবার, হয়তো ৮-১০ওভার চলতো খেলা। তাই অজিদের জয়োল্লাস মিইয়ে দিয়ে ডিফেন্স করে ম্যাচটা বাচানোর শেষ চেষ্টা করতে ভাঙা আঙ্গুল নিয়েই মাঠে নামেন গ্রায়েম স্মিথ। মুখোমুখি হন মিচেল জনসনের। বেশ ভালই ডিফেন্স করে যাচ্ছিলেন, প্রতিটা মুহূর্ত গুনছিল সাউথ আফ্রিকা। প্রচণ্ড গতির অসাধারণ এক ইনসুইংয়ে বোল্ড হয়ে স্মিথ হয়তো ম্যাচটা বাঁচাতে পারলেন না। কিন্তু দেশের জন্য অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিলেন মানুষের মনে।
৬)গ্যারি কারস্টেন(দক্ষিণ আফ্রিকা), বনাম পাকিস্তান, ২০০৪:
শোয়েব আক্তারের আগুনের গোলায় আঘাতে মাঠ থেকে যখন তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়, তখনো ফোটা ফোটা রক্ত বন্ধই হচ্ছিল না। এক্সরে করে দেখা গেল, নাক ভেঙে গেছে ওয়ানডাউন হিসেবে খেলতে নামা গ্যারি কারস্টেনের।
পাকিস্তান প্রোটিয়াদের ৩২০রানের জবাবে ৪০১করে প্রথম ইনিংসে। ২য় ইনিংসে ৮১রানে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ১৪৯রানে ৪উইকেট হারায়, নাকে প্লাস্টার নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন গ্যারি কারস্টেন।
পাকিস্তান বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে দৃঢ় মনোবল নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই করে ৪৬রান করে ৭ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। ম্যাচটা পাকিস্তান সহজে জিতলেও কারস্টেনের ইনিংস আলোচিত ও প্রশংসিত ছিল।
৭)ইয়ান বেল(ইংল্যান্ড), বনাম বাংলাদেশ, ২০১০:
ম্যাচটা বাংলাদেশীদের জন্য আবেগের। ম্যাশের অধীনে প্রথম ওয়ানডে জয়, ইংল্যান্ডকে বধ করা।
ইয়ান বেল সে ম্যাচে পায়ে আঘাত পান,
মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে, নিয়মিত পজিশনে ব্যাট করতে পারেননি।
কিন্তু জয়ের জন্য যখন শেষ ওভারে ১০রান লাগে, সেট ট্রট ৯০রানে অপরাজিত, ২২৭রানে ৯ম উইকেট পড়ার পর ট্রটকে সঙ্গ দিতে ইঞ্জুরড পা নিয়েই নেমে পড়েন বেল। যদিও তাঁকে একটি বলও মোকাবেলা করতে হয়নি, দুবার দৌড়াতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই সাহস সফলকাম হয়নি, ইংল্যান্ড ৫রানে হেরে যায়, বাংলাদেশ পায় ঐতিহাসিক জয়।
৮)সোহাগ গাজী(বাংলাদেশ), বনাম আফগানিস্তান, ২০১৪:
হাতে কিছুটা ইঞ্জুরি ছিল। ব্যাটিংয়ে না নামাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু দল যখন সংকটে, এসব ইনজুরি চিন্তা হয়তো দূরে সরে যায়। ২০১৪এশিয়া কাপে সেই আফগানিস্তান ম্যাচে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনজুরি নিয়ে মাঠে নামেন সোহাগ গাজী। তবে সফল হতে পারেননি। চাপের মুখে লফটেড শট মেরে আউট হয়ে বাংলাদেশ ইনিংসের যবনিকা পতন ঘটান।

মাইকেল ক্লার্ক, ওয়াহাব রিয়াজ, কলিন কউড্রের মত ক্রিকেটাররাও ইনজুরিকে পরোয়া না করে শরীরে আঘাত নিয়ে দলের বিপদে মাঠে নেমে পড়েছিলেন।

কালেক্টেড

*




0 Comments 644 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024