FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

ঈদের আনন্দ

ঈদের আনন্দ

*

অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হলাম মার্কেটের উদ্দেশ্য মার্কেটে গিয়ে সবার জন্য কেনাকাটা করে আবার চলে গেলাম রেলস্টেশনে গিয়ে আমার আগে থেকে কেনা ট্রেনের টিকেট টা নিলাম(ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিনেছি)
ঘড়িতে দেখলাম রাত ৮:৫৬ মিনিট আর মাত্র ৮ ঘন্টা সময় আছে সকাল হওয়ার কিন্তু এখান থেকে আমার বাড়ি যেতে সময় লাগে ৫ ঘন্টা।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর ট্রেন চলে এলো অনেক মানুষের ভিড় সবাই আমার মতো হতভাগা কপাল নিয়েই দেশের বাড়ি চলেছে।
আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে গিয়ে ট্রেনে আমার সিট খুজতে লাগলাম কিছুক্ষন পর আমার সিট পেলাম এবং বসে পড়লাম।
দেখলাম আমার পাশে একজন বয়স্ক লোকের সিট।
অহহ সর‍্যি আপনাদের আমার পরিচয় দেইনি এখন আমার নাম মিলহান বাবা মায়ের ২য় ছেলে আর আমার বড় এক ভাই আর ছোট এক বোন ভাইয়ের নাম ফারহান আর বোনের নাম মিতালী,ভাই বিয়ে করেছেন ভাইয়ের এক ছেলে এক মেয়ে,,,, আর বাকিটা পরে জেনে নিবেন।
এই তো আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে ট্র্বন ছেড়ে দিলো।
ট্রেনে অনেক মানুষ আজ ঈদের আগের দিন তাই সবাই নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার জন্য যে করেই হোক ট্রেনে উঠে পড়েছে।
কেউ কেউ আবার ট্রেনের টিকেট কিনেনি।
।।।।।।।।
হঠাৎ দেখলাম আমার পাশের বয়স্ক লোকটি একটি পানির বোতল বের করলেন কিন্তু বোতলে পানি নেই, তাই আমি আমার কাছে থাকা বোতল টি বের করে দিলাম।
।।
আমি:আংকেল এই নেন পানি,,
।।
পানির বোতল নিয়ে পানি খাওয়ার পরে।
।।
লোকটি:ধন্যবাদ, বাবা আপনার নাম কী?
।।
আমি:আমার নাম মিলহান,,,,আপনার নাম কী?
।।
লোকটি:আমার নাম আরমান মিয়া,,,,,
।।।।।।
আংকেলের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে আমি আমার মোবাইল বের করে মায়ের কাছে ফোন দিলাম,,,,,,,,
আমি:আসসালামওয়ালাইকুম,,,,,
।।
মা:ওয়ালাইকুমাসসালাম,,,,,, বাবা তুই কি বাড়িতে আসবি না?
।।
আমি:এই যে মা আসছি আমি বর্তমানে ট্রেনে আছি,,,
এভাবে মায়ের সাথে আরোও কিছু কথা বলার পর ফোন রেখে হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।
হঠাৎ ট্রেন থেমে গেলো আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা তাহেরপুর স্টেশন।
কিছুক্ষন পর একজন চাওয়ালা চা চা বলে চিৎকার করতে করতে আসল আমি এক কাপ চা কিনে খেতে লাগলাম।।
কিছুক্ষন পর হঠাৎ ট্রেনের ভিতরে মাইকের শব্দ শুনা গেলো,,,,, কেউ একজন বলছে ট্রেনের ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে যতক্ষণ না ইঞ্জিন ঠিক হচ্ছে ততক্ষণ এখানে থাকতে হবে,,,,, এটা শুনার পর থেকে যাত্রীদের মধ্যে বিশৃঙকলা সৃষ্টি হলো,, ,
কেউ কেউ ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে,,,,,,,,
আমি কিছুক্ষণ ট্রেনে থেকে ভাবলাম নেমে গিয়ে কিছু খেয়ে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ ট্রেন থেকে নেমে একটা চায়ের দোকান খোলা দেখে সেখানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে বসে মোবাইলে দেখলাম কয়টা বাজে এখন বাজে০১:৩৩ মিনিট.।
আজ আমার নিজেকেই গালি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে কারণ যদি আরোও দুই দিন আগেই বাড়ি যেতাম তাইলে আজ এ দূর্ভোগ পোহাতে হত না।
চা খেয়ে মায়ের কাছে কল দিলাম ধরল আমার ছোট বোন,, ,,
।।
মিতালী:আসসালামওয়ালাইকুম ,
।।
আমি:ওয়ালাইকুমাসসালাম,,,,, কেমন আছিস?
।।
মিতালী:ভালো,,,,
।।
আমি:আমাদের এখানে ঈদের নামাজ কয়টার সময়??
।।
মিতালী:৮:০০ টার সময়।
।।
আমি:আচ্ছা রাকি পরে কথা বলব।
।।
মিতালি কিছু বলতে চাই ছিলো আমি আর কিছু না বলে কল কেটে দিলাম।।।
প্রায় ১ ঘন্টা পর ট্রেনের ইঞ্জিন ঠিক হওয়ার পর আবার যাত্রা শুরু হলো।
।।।।।।
আরোও প্রায় ৩ ঘন্টা যাত্রা শেষে আমি আমার গন্তব্য স্থানে পৌছলাম।।
নুর নগর স্টেশনে এসে অটো /সিএনজি খুজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না অবশেষে হাঁটা শুরু করলাম বাড়ির দিকে।
অহহ বলাই হয় নি স্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় ২ কি.মি দূর।
অবশ্যই আধার কেটে পূর্ব আকাশে সূrrয মামা উকি দিচ্ছিল।
এখন হাঁটতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সব কষ্ট মন থেকে ঝেড়ে ফেলে হাঁটতে হচ্ছে।।
হাটতে হাটতে মনে পড়ল সেই শৈশবের কথা। কত না মজা করেছি এরকম ঈদের দিন আমরা বন্ধুরা মিলে।
।।
আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত কে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করতে পারে।
এগুলো মনে পড়ছিল তখন আমি একটা বস্তির রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম।
হঠাৎ শুনতে পেলাম একটা ছোট শিশুর কান্না+কার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে।
আমি কি নিয়ে কান্না করছে সেটা জানার জন্য একটু কাছে গেলাম যে ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল সেই ঘরের।।
কিছুটা কাছে গিয়ে শুনতে পেলাম একটা ছোট শিশু তার মাকে বলছে মা তুমি কান্না কর না আমি আর কোন দিন তোমার কাছে কিছু চাইব না,মা আমার নতুন কাপড় লাগবে না মা ।।
আরোও অনেক কথা বলছে সাথে একটা মেয়ে কন্ঠের চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে অভাবের কারণে ছোট শিশুটার মা থাকে কাপড় কিনে দিতে পারেন নি তাই কান্না করছিল তার মা আর শিশুটা তার মাকে সান্তনা দিচ্ছিল।।।
।।
আমি ঘরটার দরজার সামনে গিয়ে ডাক দিলাম ঘরে কেউ থাকলে আমাকে একটু সাহায্য করেন প্লিজ,,(জানি সরাসরি ডাক দিলে কোন সাড়া পাবো না তাই)
কেউ থাকলে একটু পানি প্লিজ।।
ঘরে থাকা মেয়েটি তার সন্তান কে দিয়ে একটা গ্লাসে করে পানি পাঠাল।।
শিশুটার বয়স হবে ২-৩ বছর।
আমি পানি খেয়ে শিশুটাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কি??
শিশুটা:আমার নাম রাফি,,,,,
।।
আমি:আচ্ছা রাফি তোমার ঘরে আর কে কে আছে?
।।
রাফি:আমার মা আর আপু।।
।।।।।।।
তারপর রাফিকে দিয়ে তার মাকে আনার কথা বললাম।
রাফি কিছুক্ষণ পর তার মা আর তার বোন কে নিয়ে এলো,,,,।।
।।
আমি:আসসালামওয়ালাইকুম,,,,
।।
মেয়েটি:ওয়ালাইকুমাসসালাম,,,,কে আপনি??
..
আমি:আমি মিলহান এখান থেকে পূর্বে ১ কি.মি পর আমার বাড়ি।।
।।
মেয়েটি:কি চান এখানে,,,,
।।
আমি:কিছুই চাই না।আপনার নাম কি?
.।
মেয়েটি:আমার নাম শিলা,
।।
আমি:আচ্ছা একটা কথা বলব,,,,,
।।
শিলা:বলেন,,,
।।
আমি:আপনার স্বামী কোথায়??
..
শিলা:আমার স্বামী আজ থেকে দু বছর আগে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।।
।।
আমি:আচ্ছা রাফি তারা স্কুলে যায় নাকি??
।।
শিলা:অভাবের সংসার আমি মানুষের বাসায় কাজ করে যা আয় করি তা দিয়ে কোন রকমে আমাদের তিন জনের খেয়ে বাচা যায় তাই তাদের স্কুলে পাঠাতে পারিনা।
আমার আর বলার কিছু ছিল না।
তারপর আমি আমার ব্যাগ থেকে আমার ভাইয়ের ছেলে-মেয়ের জন্য যে কাপড় এনেছিলাম তা শিলার ছেলে মেয়ের হাতে দিলাম এবং মিতালীর জন্য যে কাপড় এনেছিলাম তা ওর হাতে দিলাম।।
।।
ও প্রথমে নিতে না চাইলে ও পরক্ষণে আমার জোরাজুরিতে নিলো।
তারপর শিলার হাতে আমার কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা দিয়ে বললাম তুমি আমার বোনের মতো প্লিজ এই টাকা নাও আর তুমি টাকাটা দিয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনে ঘরে বসে উপার্জন করে তোমার শিশুদের স্কুলে পাঠাবে।।
।।
শিলা:না ভাই আপনে যা করেছেন আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট আর লাগবে না।।
।।
আমি:যদি কোন ভাই তার বোনের উপকারে আসতে না পারে তাইলে কি ভাবে হবে তাই আমি বলছি তুমি টাকাটা নাও,, আমি আবার ব্যাগ থেকে সেমাই এর প্যাকেট টা বের করে দিলাম শিলার হাতে এবং আমাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।।
।।
বাড়িতে এসে দেখলাম মা দাঁড়িয়ে আছে সদর দরজার পাশে আমি মায়ের কাছে গিয়ে মা সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।।
।।
মা ::এতো দেরি হলো কেনো আসতে বাবা,
।।
আমি:পরে বলব মা আমি তাড়াতাড়ি গোসল করে নামাজে যাই আর মাত্র ১৭ মিনিট আছে নামাজের বাকি।।
।।
আমি আসার আগেই বাবা আর ভাইয়া নামাজের উদ্দ্যেশে বাড়ি থেকে চলে গেছে।
আমি তাড়াতাড়ি গোসল করে ঈদগাহের দিকে গিয়ে নামাজ শেষে বাড়ি এসে দেখলাম টেবিলে আমার জন্য খাবার রেডি।।
আমি বাবা আর ভাইয়াকে সালাম করে মিতালী ভাবি সহ সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসে রাত থেকে এখন যা হয়েছে সব কিছু বলার পর।।
।।
বাবা:আমি সবাইকে বলতে পারব আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।।
।।
মা:খুব ভালো কাজ করেছিস বাবা।
আমাদের কিছুই লাগবে না আমরা এটাই চাই তোরা সব সময় ভালো থাক।।।
স মা প্ত

লেখক: Milhan R Ahmed

*




0 Comments 493 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024