FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

পেঁয়াজকাহন

পেঁয়াজকাহন

*



আজ 'সবজী উন্নয়ন সমিতি' র মাসিক মিটিং। রাত দশটায় মিটিং শুরু হবে। সম্পাদক ঢেঁরস সবার কাছে পত্র মারফতে যথাসময়ে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছে।
একে একে সব সবজী মিটিং এ আসতে শুরু করেছে। দশটা বেজে গেলেও আলু এখনো আসেনি। আলুর পাঁচ মিনিট দেরি হওয়াতে বেগুন, পটল, রসুন ওকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করলো। আলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যত দোষ আলু ঘোষ।

পেঁয়াজ ও লঙ্কা এখনো মিটিং এ আসেনি। লঙ্কা চিরকালই দেরি করে। সবজীকুলের চিরকুমারী সুন্দরী 'মিস লঙ্কা' খেতাব পাওয়ায় সবসময় ওর আলাদা কদর। কথাও বেশ ঝাঁজালো বলে ওর পেছনে কেউ লাগতে চায় না।
আধাঘন্টা দেরি করে মিটিং আসলেও কেউ টু শব্দ করেনি অথচ আলুর বেলায়! আলুর দোষ কি না ; আসলে দুর্বলের উপর সবলের মুখ চিরকালই সোচ্চার।

'সবজী উন্নয়ন সমিতি' সংগঠনের সভাপতি, সবজীকুলের গর্ব, মিষ্টিকুমড়ার নয়নের মনি, শাকের রাজা পুঁইসাহেব মিটিং শুরু করলেন। প্রায় এক ঘন্টা হলো তবুও পেঁয়াজের দেখা নেই। ইদানীং ওর দাম বাড়াতে খুব ভাব বেড়েছে। অথচ কদিন আগেও সবজীকুলের কেউ তো ওকে পেঁয়াজ বলে ডাকতোই না ; সবাই বলতো লাল্টু নামে। পত্রিকার হেডলাইন হওয়াতে ওর যেন মাটিতেই পা পড়ছে না।
প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর পেঁয়াজ হেলেদুলে মিটিং এ এলো। সবাই চুপচাপ। অথচ আগের অবস্থা থাকলে সবাই পেঁয়াজকে আচ্ছা ধোলাই দিতো। গরমকালে পেঁয়াজকে ক্ষ্যাপানো সহজ। শুধু ওর কানের কাছে বলতে হয়, কি রে লাল্টু গরমকালে এতো জামাকাপড় পরেছিস ক্যান? ব্যস্ হয়ে গেল।

আজকে মিটিং এ আলোচনার বিষয়বস্তু কোন সবজীর মৃত্যু বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। শুরুতে আলু বলল, আমার মৃত্যু সবচে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এমন কোন সবজী নেই যার সাথে আমি মিশি না। সবার সাথে মিলেমিশে থেকে মারা যাওয়ার কারণে আমার মৃত্যু বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। রসুন আর আদা টিপ্পনী কাটলো, সব সবজীর সাথে মিশে পরকীয়া করিস আর বলিস আমার মৃত্যু তাৎপর্যপূর্ণ।
তেজপাতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, কি আর বলবো মানুষ তো আমাকে খেয়েই দেখে না। খাবিই না যখন তখন তরকারিতে দেওয়ার দরকার কি। উফ্, আগুনের আঁচে বুঝি আমার স্কিন নষ্ট হয় না।
মিটিং এর মাঝখানে কলা আর লেবুর তর্ক কিছুতে থামছেই না। পুঁই একাধিকবার সতর্ক করে দিলেও কোন কাজ হয়নি।
কলা লেবুকে বলেছে, লেবুভাই আপনার যে কি কষ্ট ; মানুষ আপনাকে খাওয়ার সময় চিপে চিপে খায় আপনার কষ্ট হয় না?
একথা শুনে লেবুর মাথায় আগুন। লেবু বলল, তাতে আপনার কি? আপনার মতো নির্লজ্জ কেউ আছে? মানুষ খাওয়ার সময় আপনাকে ল্যাংটো করে।

সবশেষে পেঁয়াজ বলল, তোদের চিপে মারুক আর ল্যাংটা করেই খাক কিংবা না খেয়েই ফেলো দিক তাতে আলাদা কোন মাহাত্ম্য নেই। আমার মৃত্যু দেখ কত তাৎপর্যপূর্ণ। মরার আগে কেউ যদি দুফোঁটা চোখের জল না ফেলে তবে সে জীবন বৃথা। আমি মারা যাবার আগে সবাইকে কাঁদিয়ে মরে যাই।
এমন মৃত্যু সবার কপালে জোটে না।

পেঁয়াজের বক্তব্য শেষ না হতেই রসুন বলল
শুরু হলো নিজের ঢোল নিজে পেটানো। গায়ে যে দুর্গন্ধ সেটা কে বলবে। এই কথা শুনে পেঁয়াজ রেগে অগ্নিশর্মা। ও মিটিং থেকে রাগ করে চলে গেল।
রসুন বলল, আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারি। আমার মতো ফর্সা কেউ আছে এ সবজীকুলে ?
পেঁয়াজের দম্ভ দেখি কদিন থাকে!
মরতে তো সবাইকেই হবে; তার আগে চলো একটু আনন্দ করে বাঁচি।
পটল গান ধরলো,
'চুরি করেছো আমার মনটা হাইরে হায় মিস লঙ্কা '
লঙ্কাও কম যায় না। তার ঝাঁজালো কণ্ঠে সুর মেলালো , চুরি করেছি তোমার মনটা এই যে আমি মিস লঙ্কা।
সেদিনের মতো মিটিং শেষ করে সবাই বাড়ি চলে গেল।

(সংগৃহীত)

*




3 Comments 698 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024