মৃত্যুর সাথে ঘুমের অনেক মিল রয়েছে।
এদিক থেকে ঘুম হচ্ছে জাগরণ ও মৃত্যুর
মাঝামাঝি একটা অবস্থা। তাই মুমিনেরে
কর্তব্য ঘুমাতে যাওয়ার সময় আল্লাহকে
স্মরণ করা। গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া
এবং এসময়ের উপযোগী মাসনূন দুআগুলো পাঠ করা। এখানে ঘুমের সময়ের কিছু
মাসনূন দুআ উল্লেখ করা হল: ১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, তুমি
যখন ঘুমুতে যাও তখন বল, َﺖْﻧَﺃَﻭ ﻲِﺴْﻔَﻧ َﺖْﻘَﻠَﺧ َﺖْﻧَﺃ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ
،ﺎَﻫﺎَﻴْﺤَﻣَﻭ ﺎَﻬُﺗﺎَﻤَﻣ َﻚَﻟ ،ﺎَﻫﺎَّﻓَﻮَﺘَﺗ
ْﻥِﺇَﻭ ،ﺎَﻬَﻟ ْﺮِﻔْﻏﺎَﻓ ﺎَﻬَﺘْﻴَّﻓَﻮَﺗ ْﻥِﺇ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ
َﻚُﻟَﺄْﺳَﺃ ﻲِّﻧِﺇ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ،ﺎَﻬْﻈَﻔْﺣﺎَﻓ ﺎَﻬَﺘْﻴَﻴْﺣَﺃ
َﺔَﻴِﻓﺎَﻌْﻟﺍ . অর্থ : ইয়া আল্লাহ! তুমিই আমার প্রাণ
সৃষ্টি করেছ, তুমিই তা উঠিয়ে নিবে।
আমার জীবন-মৃত্যু তোমারই এখতিয়ারে।
ইয়া আল্লাহ! যদি আমাকে মৃত্যুদান কর
তাহলে ক্ষমা করে দিও আর যদি বাঁচিয়ে
রাখ তাহলে (সর্বপ্রকার বালা-মুসিবত ও গুনাহ থেকে) আমাকে হেফাযত কর। ইয়া
আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা
করছি নিরাপত্তা। -সহীহ ইবনে
হিব্বান, হাদীস ৫৫৪১ এ সংক্ষিপ্ত দুআটি আবদিয়াত ও দাসত্বের
আবেগানুভূতিতে পরিপূর্ণ। আর আল্লাহ
তাআলার দরবারে দাসত্ব ও দীনতা এবং
বিনয় ও অক্ষমতা প্রকাশই তাঁর রহমত
টেনে আনার বড় উপায়। বিশেষ করে ঘুমের
সময় কোনো বান্দার এধরনের দুআর তাওফীক হওয়া তার প্রতি আল্লাহ
তাআলার বিশেষ কৃপাদৃষ্টির আলামত। ২. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শয্যা গ্রহণের সময় বলতেন, ،ﺎَﻧﺎَﻘَﺳَﻭ ﺎَﻨَﻤَﻌْﻃَﺃ ﻱِﺬَّﻟﺍ ِﻪَّﻠِﻟ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ
ُﻪَﻟ َﻲِﻓﺎَﻛ ﺎَﻟ ْﻦَّﻤِﻣ ْﻢَﻜَﻓ ،ﺎَﻧﺍَﻭﺁَﻭ ﺎَﻧﺎَﻔَﻛَﻭ
َﻱِﻭْﺆُﻣ ﺎَﻟَﻭ অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি
আমাদের আহার দিয়েছেন, পানীয়
দিয়েছেন, সকল প্রয়োজন পূরণ করেছেন
এবং আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই
দিয়েছেন। অথচ কত মানুষ রয়েছে যাদের
নেই কোনো প্রয়োজন পূরণকারী, নেই কোনো আশ্রয়দাতা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস
২৭১৫ এ দুআর মর্ম এই যে, আমরা যা খাই, যা
পান করি, যা কিছু লাভ করি সবকিছুই
মহান আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ। সত্যিকার
অর্থে আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধির কোনো
কার্যকারিতা এতে নেই। এজন্য তিনিই
প্রশংসার যোগ্য। যে ঘুমানোর সময় এ দুআ পাঠ করল সে যেন
তার খাদ্য, পানীয় ও সকল ব্যবহার্য
নিআমতের শুকরিয়া আদায় করল। ৩. হযরত হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন রাতে শয্যাগ্রহণ
করতেন তখন নিজের হাতটি গালের নীচে
রাখতেন। (অর্থাৎ ডান হাত ডান গালের
নীচে রেখে ডান কাতে কেবলামুখি হয়ে শুয়ে যেতেন। যেমন অন্যান্য হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে) তারপর বলতেন, ﺎَﻴْﺣَﺃَﻭ ُﺕْﻮُﻣَﺃ َﻚِﻤْﺳﺎِﺑ َّﻢُﻬﻠّﻟَﺍ অর্থ : ইয়া আল্লাহ! তোমার নামেই আমার
মরণ, তোমার নামেই আমার জীবন। আর
যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন বলতেন, ﺎَﻣ َﺪْﻌَﺑ ﺎَﻧﺎَﻴْﺣَﺃ ْﻱِﺬَّﻟﺍ ﻪﻠﻟ ُﺪْﻤَﺤْﻟَﺍ
ﺭْﻮُﺸُّﻨﻟﺍ ِﻪْﻴَﻟِﺇَﻭ ﺎَﻨَﺗﺎَﻣَﺃ . অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি
আমাদের মৃত্যু দিয়ে আবার জীবনস্ফ দান
করেছেন। আর অবশেষে আমাদেরকে তাঁরই
কাছে ফিরে যেতে হবে। -সহীহ বুখারী,
হাদীস ৬৩১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস
২৭১১ হযরত বারা রা. থেকে যেহেতু মৃত্যুর সাথে ঘুমের অনেক মিল
রয়েছে তাই এ দুআয় ঘুমকে মৃত্যুর সাথে
এবং জাগরণকে মৃত্যুর পর পুনর্জীবন
লাভের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এভাবে
প্রতিদিনের নিদ্রা ও জাগরণকে মৃত্যুর
পর পুনর্জীবনের স্মারক ও এর প্রস্তুতি চিন্তার উপায় বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘুমের ও ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময়েরর
দুআগুলোর মধ্যে এ দুআটি খুবই সংক্ষিপ্ত,
সুতরাং মুখস্থ রাখাও খুব সহজ। ৪. হযরত বারা ইবনে আযিব রা. হতে
বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বলেছেন, তুমি যখন ঘুমুতে যাও
তখন নামাযের মত ওযু করবে তারপর ডান
কাতে শোবে এবং বলবে, ُﺖْﺿَّﻮَﻓَﻭ ،َﻚْﻴَﻟِﺇ ﻲِﻬْﺟَﻭ ُﺖْﻤَﻠْﺳَﺃ َّﻢُﻬّﻠﻟﺍ
ًﺔَﺒْﻏَﺭ ،َﻚْﻴَﻟِﺇ ﻱِﺮْﻬَﻇ ُﺕْﺄَﺠْﻟَﺃَﻭ ،َﻚْﻴَﻟِﺇ ﻱِﺮْﻣَﺃ
ﺎَّﻟِﺇ َﻚْﻨِﻣ َﺄَﺠْﻨَﻣ َﻻَﻭ َﺄَﺠْﻠَﻣ َﻻ ،َﻚْﻴَﻟِﺇ ًﺔَﺒْﻫَﺭَﻭ
ﻱِﺬَّﻟﺍ َﻚِﺑﺎَﺘِﻜِﺑ ُﺖْﻨَﻣﺁ َّﻢُﻬّﻠﻟﺍ ،َﻚْﻴَﻟِﺇ
َﺖْﻠَﺳْﺭَﺃ ﻱِﺬَّﻟﺍ َﻚِّﻴِﺒَﻨِﺑَﻭ ،َﺖْﻟَﺰْﻧَﺃ . অর্থ : ইয়া আল্লাহ! আমি আমার সত্তাকে
তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আমার সকল
বিষয় তোমার উপর ন্যস্ত করলাম আর
তোমাকেই আমার পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে
নিলাম। তোমার প্রতাপের ভয় ও রহমতের
আশা নিয়ে। তুমি ছাড়া নেই কোনো আশ্রয়স্থল, কোনো আত্মরক্ষার স্থান।
তোমার কিতাবের উপর ঈমান এনেছি, যা
তুমি নাযিল করেছ এবং তোমার নবীর উপর
ঈমান এনেছি, যাঁকে তুমি প্রেরণ করেছ। এ দুআ শিক্ষা দিয়ে বলেন, তুমি যদি এ দুআ
পড়ে মারা যাও তাহলে তোমার মৃত্যু হবে
দ্বীনে ফিতরতের উপর তথা ঈমানের
উপর। আর এ দুআ যেন হয় তোমার ঘুমের
আগের শেষ কথা। (অর্থাৎ এটা পাঠ করার
পর আর কোনো কথা যেন না বলা হয়।) - সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩১১; সহীহ
মুসলিম,