১৯৯৬ সাল জাপানী সম্রাটের ৬৩তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলছিল পেরুর রাজধানী লিমার জাপানী দূতাবাসে। বর্ণাঢ্য সেই অনুষ্ঠানে ৬০০ এর অধিক কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। কিন্ত সেখানে অনুষ্ঠান চলাকালে ১৪ জন টুপ্যাক আমারু কমিউনিস্ট বিপ্লবী অনুপ্রবেশ করে। এখন প্রশ্ন কিভাবে অনুপ্রবেশ করল? পেরুর সেই দূতাবাসের দায়িত্বে ছিল প্রায় ৫০০ এর অধিক নিরাপত্তারক্ষী এত গুলি মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা ভবনে প্রবেশ করে উপস্থিত অতিথিদের জিম্মি করে। সেটা আসলেই অবাক করার মতন বিষয়। যাক এবার আসল কথায় আসি জাপানী দূতাবাসের এই বিশাল অনুষ্ঠান যে হবে সেই বিষয়ে অনেক থেকে জানা ছিল বিদ্রোহীদের। জাঁক জমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশী মেহমান আসবে সেটাও ভাল করে জানতো তাঁরা। ফলে বিদ্রোহীরা একটা প্ল্যান করে। তাঁরা তাঁদের এজেন্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সেখানে কারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে যেহেতু অনেক বড় অনুষ্ঠান তাই বিশেষবাহিনী থাকবে। আর বিশেষ বাহিনীর দুটি শিফটে ডিউটি করবে।
বিদ্রোহীরা সেই ডিউটির সময়েরই চান্স নেয়। তাঁরা ডিউটির যখন চেইন্স হবে তাঁর কিছুক্ষণ আগে তাঁরা একই গাড়ি ব্যবহার করে মানে নিরাপত্তারক্ষীরা যেই পোশাক ব্যবহার করে ও গাড়ি সেই গাড়ির মতন পেইন্ট করে একই ব্র্যান্ডের একটি ট্রাক নিয়ে হাজির হয়। ডিউটিরত নিরাপত্তারক্ষীরা মনে করেছিল নতুন ডিউটি নেওয়ার জন্য ছোট একটা অংশ এসেছে। তাঁরা কেউ ধারণা করতে পারেনি বিদ্রোহীরা এমনভাবে এসে দূতাবাসের ভিতরে অবস্থান নিভে। কিন্ত বিপত্তি দেখা দিল তখনই যখনই তাঁরা ডিউটি সাইন করবে তখনই এলোমেলো অবস্থায় তাঁদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়! এই চান্সে উপস্থিত বিদ্রোহীরা এক প্রকার কোন বাঁধা না পেয়ে দূতাবাসের ভিতরে ডুকে যায়। বিভিন্ন যায়গায় পজিশন নিয়ে তাঁরা মাত্র কয়েক মিনিটেই পুরা দূতাবাসের ভিতরে ভারী অস্ত্র নিয়ে চলে যায় ও উপস্থিত সবাইকে জিম্মি করে দূতাবাসের ভিতরের সকল গেইট বন্ধ করে দেয়।
অপরদিকে বাইরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। তাঁরা বিষয়টি একটু পরেই বুঝলেন যে ট্রাকে করে যারা এসেছে তাঁরা আর কেউ নয় বিদ্রোহী। তাঁদের বোকা বানিয়ে তাঁরা অবস্থান নিয়েছে ভিতরে। আর বাইরে থাকা কাউন্টার করার জন্য যারা ছিল তাঁদের প্রায় সবাই নিরাপদে এতক্ষণে চলে গিয়েছে। দূতাবাসের ভিতরে অবস্থান নিল ১৪ প্রশিক্ষিত বিদ্রোহী। তাঁরা জাপানী দূতাবাসের সবাইকে জিম্মি করে সরকারের কাছে তাঁদের দাবী ও আটক হওয়া নেতাদের মুক্তি দাবী করে। উক্ত ঘটনায় পেরু সরকার চরম চাপে পরে যায়।
এই অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়ে টুপ্যাক আমারু কমিউনিস্ট বিপ্লবী বাহিনীর শীর্ষ ১৬ জন নেতাকে মুক্তি দেয়। ফলে বিদ্রোহীরা তাঁদের হাতে আটক করা বিভিন্ন দেশের মোট ১৭২ জনকে মুক্তি দেয়। একদিকে আলোচনা ও আরেকদিকে উদ্ধার চেষ্টা জিম্মি এই অবস্থা ৪ মাস বিরাজ করে। এই অবস্থায় পেরু সরকারকে দেশের বাইরে থেকে আটক ও জিম্মি হওয়া নাগরিকদের দেশ থেকে চাপ দিতে থাকে। আমেরিকা, ব্রিটেন অনেক দেশই পেরুকে কমান্ডো পাঠিয়ে উদ্ধার করার প্রস্তাব করে। কিন্ত পেরু সবাইকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজেই অবশেষে দূতাবাসের ভিতরে কমান্ডো অভিযানে পরিকল্পনা করে।
উক্ত ৪ মাস সময়ে সেনা, বিমান ও নেভির বাছাই করা ১৪২ জনের একটি বিশেষ কমান্ডো বাহিনী তৈরি করা হয়। উক্ত বাহিনীর নাম দেওয়া হয় শাভিন ডে হুয়ান্টার। এই বাহিনীকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে দূতাবাসের অবিকল প্রতিকৃতি তৈরি করে দেয়া হয়। সেখানে তারা গোপনে ১ মাস উদ্ধার কর্মসূচির খসড়া পরিকল্পনা করে অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কল্পনাযোগ্য সকল উপায় ২০ বারের বেশী করে চেষ্টা করা হয় প্রতিকৃত বাড়িটিতে। বলাই বাহুল্য, সবচেয়ে অবাস্তব পদ্ধতিটাই বেছে নেয়া হয় চূড়ান্ত অভিযানের জন্য। অবশেষে বাহিনীটিকে দুটি দলে বিভক্ত করা হয়। একদল মূল প্রবেশপথের গেইট ভেঙ্গে গুলি বিনিময় করে এগিয়ে যায় এবং অন্যদল আগে থেকেই গোপনে দূতাবাসের নিচ দিক দিয়ে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করে মেঝে ভেঙে প্রবেশ করে। সুরঙ্গ করে ডুকা কমান্ডোরা ভিতরে ডুকেই অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের দিকে গুলি করে এতে ১৪ জন জঙ্গী ও একজন বিদেশী বন্দী নিহত হন। উদ্ধার অভিযানে ২৮২ জন বন্দীকে উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনায় ২ জন কমান্ডো নিহত হয় পুরো অভিযানে মোট ১৭ জন নিহত ও ৭৬ জন আহত হয় উল্লেখ্য কমান্ডোবাহিনী প্রায় ৩ কিলোমিটার সুরঙ্গ করে দূতাবাসের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপরে যারা উক্ত এই জিম্মি ঘটনার সাথে জড়িত তাঁদের সবাইকে খুঁজে বের করা হয় ও বিচারের আওতায় আনা হয়।
Posted By: monir_hasan
Post ID: 6496
Posted on: 4 years 2 months ago
Authorized by: frozen