FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

এনিমি (২০১৩) রিভিউ অ্যান্ড এক্সপ্লেনেশন

এনিমি (২০১৩) রিভিউ অ্যান্ড এক্সপ্লেনেশন

*

🎬Enemy নিজেই যখন শত্রু!
⚠Spoiler Alert(Explanation)

Enemy, ২০১৩ সালের Denis Villeneuve পরিচালিত একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রীলার মুভি।যেখানে লীড রোলে ছিলেন;জ্যাক গিলেনহাল,মেলানিয়া লরেন্ট,সারাহ গডন।
মুভির কাহিনী তে আমরা দেখতে পাই, দু'জন আইডেন্টিক্যাল পারসন একে অপরের ব্যাক্তিগত জীবনে হানা দিচ্ছেন,একে অপরকে তাড়িয়ে বেড়োচ্ছেন! মুভিটি José Saramago’s এর The Double বইটির এডাপটেশন। এনিমি একিসাথে চরম হেড স্ট্রেচিং,মিস্টিরিয়াস,এবং দুর্দান্ত মেটাফোরে ভরপুর একটি মুভি,যা বেশিরভাগ দর্শকের মাথার উপরে দিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়।
আমি চেস্টা করবো এই মুভিটির প্লট এনালাইসিস সহ মুভির এন্ডিং এর ব্যাখ্যা দেয়ার,আপনাদের কাছে এই মুভিটির ব্যাপারে অল্টারনেট কোন থিওরী থাকলে কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ রইলো।

সুতরাং, যারা এখনো Enemy দেখেন নি তাদের জন্য নিচের লেখাগুলো পড়া উপযুক্ত হবেনা।

⚫এডাম /এন্থনীঃ
প্রথমেই বলে রাখি এডাম এবং এন্থনী ফিজিক্যালি একি ব্যাক্তি।মুভির কিছু কিছু অংশ রিয়েল লাইফের আর কিছু অংশ ছিল এন্থনী/এডামের সাবকনশাসনেস।আরো ক্লিয়ার করে বলি,মুভিতে জ্যাক প্রথমদিকে ইমার্জিনারি এডাম কে ক্রিয়েট করলেও শেষের দিকে এন্থনীর ক্যারেকটারেও সাব-কনশাস নেস ইন্সেপ্ট করে।যার ফলে এই ডুয়েল পার্সোনালিটির থিওরী কিছুটা কন্ট্রোভারশিয়াল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
এন্থনী ব্যাসিক্যালি দারুন স্মার্ট এক ব্যক্তি,তবে সে তার স্ত্রীর সাথে রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করাতে অক্ষম, তার স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।তিনি মুভিতে ছোটখাটো রোলে অভিনয় করেছেন, কিন্তু,সে তার স্ত্রীকে রেগুলার প্রতারিত করেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে এন্থনীর স্ত্রী হেলেন তাকে সন্দেহ করে,এন্থনীর প্রফেশনাল ক্যারিয়ার (অভিনয়) খুব একটা আহামরি ছিলনা,উনি মাত্র তিনটি মুভিতে ছোটখাটো রোলে অভিনয় করেন,যেখানে তিনি সফল ছিলেন না।
অন্যদিকে এডাম(এন্থনীর সাবকনশাস)একজন হিস্টোরি টিচার, যার ক্যারিয়ার অনেক রেস্পেক্টেবল এবং ঔজ্জ্বল্যময়,তার একজন গার্লফ্রেন্ড আছে,তবে সে ভয়ে জুবুথুবু থাকে, সর্বোপরি বোরিং লাইফ লীড করে।

⚫এন্থনী, হেলেনের দাম্পত্য জীবনঃ
এন্থনীর নারী আসক্তি ছিল,সে সেক্সক্লাবে রেগুলার যাতায়াত করতো,তার স্ত্রী হেলেনের সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করলেও তার নোংরা মনমানসিকতার পরিবর্তন হয়না,এদিকে হেলেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে এন্থনী তার আনসাকসেসফুল ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়ে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেয়।সেখান থেকেই সে তার সাব-কনশাস চরিত্র এডামকে উপস্থাপন করেন।হেলেন এন্থনীর প্রতি বিরক্ত ছিল, সেটা আমরা বুঝতে পারি এন্থনীর ফোন কল পরবর্তী সময়ে যখন হেলেন ইঙ্গিত করে "কোন মেয়ের সাথে কথা বলছিলে কিনা?"এখানে সেক্সক্লাব হেলেনের সাথে এন্থনীর প্রতারণার মেটাফোর হিসেবে চিত্রিত হয়েছে।

⚫এফেয়ার অতঃপর হতাশাঃ
এডাম(সাব-কনশাস) আর মেরির অন্তরঙ্গ দৃশ্য পরবর্তী প্রতিবারেই দেখা যায় এডাম মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছেন,না হয় মেরি অস্বস্তি নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

⚫এন্থনী এবং তার মাঃ
মুভিতে এন্থনীর সাথে তার মায়ের কনভারসেশন হয় মাত্র দুইবার,একবার ফোনে আরেকবার খাবার টেবিলে, কিন্তু, ঐ দুইবারই তার মায়ের বলা কথা মুভির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বহন করে।
যেখানে উনি কোন নাম উচ্চারণ না করলেও উনাকে এন্থনীর "এপার্টমেন্ট" দেখানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
এখানেই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই মুভিতে এডাম হচ্ছে সাব-কনশাসনেস,আর এন্থনী হচ্ছে রিয়েল,কারন মুভির শেষের দিকে যে এপার্টমেন্ট টি তে এডাম যায় ওটা একটি সিকিউরেটেড এবং চমৎকার এপার্টমেন্ট ছিল।
দ্বিতীয় কনভারসেশনে উনি বলেন"তোমার এক মহিলার সাথে থাকা কস্টকর হচ্ছে?তোমার দুর্দান্ত একটা এপার্টমেন্ট আছে,সিনেমাতে তৃতীয় সারির অভিনেতা হওয়ার আকাঙাটা ছেড়া দেয়া উচিত।
তোমার পছন্দের ব্লুবেরি আছে,খাবে?
এখানে যদি আমরা দেখি,এডাম কিন্তু ব্লুবেরি পছন্দ করেনা,কিন্তু এন্থনী তার স্ত্রী হেলেনের সাথে কথা বলার সময় তার ব্লুবেরি প্রীতি বোঝা যায়।
অর্থাৎ উনি এন্থনীর নারী আসক্তির অভ্যাস পরিহার করার সাজেশন দিয়েছেন।

⚫টোটালিটারিয়ানঃ
আমরা ডেবিড ফিঞ্চারের ফাইট ক্লাব মুভিতে দেখেছিলাম,ডুয়েল বা মাল্টিপল পার্সোনালিটির ব্যাক্তিত্ব কিভাবে একে অপরকে সেন্সর করে,অর্থাৎ ডুয়েল পার্সোনালিটির ক্ষেত্রে একটি পার্সোনালিটি আরেকটি পার্সোনালিটির কাছে অনেক কিছুই গোপন রাখে(ফাইটক্লাব সমাধান নামে আমার এক্সপ্লেনেশন পোস্ট আছে,দেখতে পারেন)।
এনিমি মুভির শুরুতে আমরা এডামকে হিস্টোরি ক্লাসে টোটালিটারিয়ান এর বিষয়ে লেকচার দিতে দেখি,যেখানে কন্ট্রোলিং বা সেন্সরশীপ এর ব্যাপারে বলা হয়।এখানে এন্থনী যখন শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করেন তখনি ইমার্জিনারি এডামকে ক্রিয়েট করে এন্থনী রিলেটেড সব বিষয় সেন্সর করে দেন।মুভিতে টোটালিটারিয়ান একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে সেটা শেষে ক্লিয়ার করবো।

⚫ডুয়েল পার্সোনালিটিঃ
এডাম যে কিনা এন্থনীর ব্যাপারে কিছুই জানেনা,একদিন এডামের কলিগ যখন বলে "তুমি কি মুভিতে ছোটখাটো রোলে অভিনয় করতে?" এডাম এ বিষয়ে কিছুই বলতে না পারতে,কলিগ একটি মুভি সাজেস্ট করে,মুভি দেখতে গিয়ে সে নিজের মত হুবহু আরেকজন কে দেখতে পায়,এরপর মুভির অভিনেতার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করে।
মুভিতে এন্থনী ড্যানিয়েল নাম ধারণ করেন,এটা অনেক নয়কই সচরাচর করে থাকেন।
এরপর এডাম, এন্থনী কে ফোন দিলে তার স্ত্রী হেলেন ফোন রিসিভ করেন,পরে আবার এন্থনীকে ফোন দিলে তারা একটি স্থানে দেখা করে,এরপর এন্থনী এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটাতে গিয়ে পার্সোনালিটি পরিবর্তন করেন।

⚫আনরিয়েলঃ
এডাম আর এন্থনী র ফোনে কথা বলা,সেক্সক্লাবের কক্ষে দেখা করা,এবং মেরির সাথে গাড়ির এক্সিডেন্ট রিয়েল ছিলনা।সেক্সক্লাব স্থানটি ঠিক ছিল,কিন্তু মিটিং রিয়েল ছিলনা।প্রশ্ন উঠতে পারে গাড়ি এক্সিডেন্ট পরবর্তী রেডিও নিউজ টি তাহলে কি ছিল?
আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখা যায়, রেডিওর নিউজটি অর্ধেক বলার পর থামিয়ে দেয়া হয়,হয়তো এক্সিডেন্ট হয়েছিল তবে সেটা এন্থনীর গাড়ি ছিলনা।

⚫স্পাইডারঃ
মুভিতে স্পাইডার একটি দুর্দান্ত মেটাফোর ছিল!স্পাইডার বা মাকড়সা যেভাবে তার শিকার কে জালে জড়িয়ে ফেলে হেল্পলেস করে দেয়,ঠিক তেমনি ভাবে এনিমি মুভিতে স্পাইডারকে নারী চরিত্রের রেস্পন্সসিবিলিটির জালে আঁটকে ফেলাকে বোঝানো হয়েছে!
সেক্সক্লাবে স্পাইডার নেকেড মহিলাকে দেখানোটা হচ্ছে এন্থনীর স্ত্রী বা আরো অন্যান্য মহিলাদের রেস্পন্সসিবিলিটির জালে আঁটকে ফেলার মেটাফোর।
মায়ের সাথে কথা বলার পর শহরে দেখানো বড় মাকড়সাটি দিয়ে উনার মায়ের দেয়া সাজেশন, মানে আরো বড় রেস্পন্সসিবিলিটি।
আরেকটি আছে,,,,, সেটি টোটালিটারিয়ান কন্সেপ্ট এর সাথে মিলিয়ে বলবো।

⚫এনিমি,পারসোনালিটি সুইচিংঃ
"তুমি আমার স্ত্রীকে এর মধ্যে টেনে এনেছো,আমিও তোমার বান্দ্ববীকে আমার কাছে নিয়ে আসবো,আমাকে তোমার কাপড় ও গাড়ি দেবে,আমি এইসব কিছুর সমাপ্তি ঘটাবো।"
এটা ছিল এনিমি মুভির একটি রিভেঞ্জ টুইস্ট!
এখানে এন্থনী আর এডামের পারসোনালিটি সুইচিং করে।

⚫এন্ডিং,এনভেলাপ, টোটালিটারিয়ান, স্পাইডারঃ
এন্থনীর ওয়েডিং রিং মেরিকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়,কারন এডামের হাতে কখনো ওয়েডিং রিং ছিলনা।
গাড়ি এক্সিডেন্ট পরবর্তী ভাঙ্গা উইন্ডশিল্ড টির ওয়েব টি সবকিছুর পরিসামাপ্তি দেখালেও,সকালবেলা কোটের পকেটে থাকা এনভেলাপ থেকে যখন একটি চাবি দেখা যায় তখন এন্থনী আবার সেই আগের রুপে ফিরে যেতে ইনিশিয়েট হয়,চাবিটি হচ্ছে সেক্সক্লাবের এক্সেস।
টোটালিটারিয়ান এর একটা রিপিটেটিভ কন্সেপ্ট আছে,প্রথমদিকে যেকোন একটা পরিচয়কে এবসলিউট করে বাকি পরিচয়কে ইগনোর বা সেন্সর করে দেয়া হয়,একি জিনিস বার বার রিপিট করা হয়।মুভিতে হিস্টোরি টিচার হিসেবে এডামের টোটালিটারিয়ান পদ্ধতির লেকচার এর সাথে সে নিজেকেও রিপিট করতে চায়।কিন্তু এন্ডিং এ বিশালকার স্পাইডার এখানে তার স্ত্রীর প্রতি অনেক বেশি রেস্পন্সসিবিলিটির জালে আঁটকে ফেলার মেটাফোর হিসেবে চিত্রিত হয়।

*




6 Comments 768 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024