FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

রমজানে করণীয় ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ - পর্ব ১

রমজানে করণীয় ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ - পর্ব ১

*

আসসালামুয়ালাইকুম
আশা করি সবাই ভালো আছেন,


১৪ তারিখে প্রথম রোজা অর্থাৎ ১৩ তারিখ ভোর রাতে বা ১৪ তারিখ প্রথম প্রহরে সাহরি খেয়ে আমাদের রোজা রাখতে হবে।



কিন্ত এই মাস এবং এই সময়গুলোতে আমাদের মূল করণীয় কি এবং কেনো এই জিনিস টা হয় অনেকে জানে। অনেকে জেনেও মানে না। আবার হতে পারে জানেও না মানেও না।



আগে বোঝা দরকার আল্লাহ তায়ালা কি পরিমাণ গুরুত্ব দিয়েছেন রমজান মাসের প্রতি।

পবিত্র কুরআনে শুধু মাত্র একটি আরবি মাসের নাম উল্লেখ আছে সেটা এই রমজান মাস।
আল্লাহ তায়ালা বলতে গেলে সব উপকারিতা এবং কল্যাণ এই মাসে দিয়েছেন।



মহা মূল্যবান এই মাস টি পাওয়া বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়।
আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া আল্লাহ আমাদের জিবনে আরেকটি রমজান মাস দিলেন।


এই মাসে বলতে গেলে আল্লাহর গাফফার এবং রহমানু এই নাম দুইটিএ মহত্ব অকাতারে ঢালতে থাকেন।



প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা সাধারণ গনহারে মাফ তো করেন ই করেন তারপর যারা রোজাদার তাদের যে কি পরিমান সোয়াব তা আমাদের নির্দিষ্ট করে জানান ই নি। অঢেল সোয়াব আমাদের একদম সামনেই অপেক্ষমান।


আর কেবলমাত্র এই রোজা রাখার উপহার বা আমলনামা আল্লাহ নিজ হাতে রোজাদারদের দিবেন
অন্য সব আমল আল্লাহ ফেরেশতাদের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন তবে এটিই শুধু ব্যতিক্রম।



শুধুমাত্র রোজাদার দের জন্য আল্লাহ স্পেশাল দরজা বানিয়ে রেখেছেন যার নাম 'রাইয়্যান' । কেবলমাত্র রোজাদাররাই এই দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাবে।


সুতরাং খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস এটি আমাদের জন্য। প্রতিটি মুসলিম উম্মাহর জন্য।



তবে, আমাদের সমাজে রেডিমেড ৪ টা জিনিস আছে যা প্রতিটি রোজাদার করেন এবং মনে করেই এই ৪ টি করলেই মনে হয় সব করে ফেলা হলো।

১) সাহরি করা
২) রোজা রাখা
৩) ইফতার করা
৪) তারাবির সলাত পড়া।



এই ৪ টা দিয়ে পুরো রমজান কভার করে ফেলার লোকের অভাব নাই।


৪ টি ই খুব গুরুত্বপূর্ণ তবে এর সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে যা একজন মুসলমানের দায়িত্ব কর্তব্য।


এই মাসে যে লোক আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা না অর্জন করলো, রাসূল সা: বলেন তার মত কপাল পোড়া লোক দুনিয়াতে নাই।

অতএব আমাদের জানতে হবে আমাদের আরো কি কি করনীয় যা করলে আল্লাহ আমাদের নাজাতের ব্যাবস্থা করে দেবেন।

তাহলে আসুন জেনে নি আমাদের করণীয় গুলো।


মোট ২০ টি করণীয় বলা + আলোচনা হবে




১) রমজানের চাঁদ দেখা : রমজানের যে চাঁদ দেখা যায় রোজার আগের দিন সন্ধ্যায় যেটাকে বহু এলাকায় বলে চানরাত বা এমন কিছু।

তবে এই চাঁদ নিজে দেখা কিংবা আকাশের দিকে চেয়ে তালাশ করার সুন্নাহ টি বলতে গেলে বিলুপ্ত বা মারা ই গেছে।

কারন কেউ আর কষ্ট করে বা আনন্দ নিয়ে চাঁদ দেখে না। বানায় রাখসে চাঁদ দেখা কমিটি, তারা দেখে আমাদের জানায়, আমরা জানি সংবাদ কিংবা অন্যকোন প্লেটফর্ম থেকে।

নিজেরা দেখতে যাওয়া প্রায় অফ হয়ে গেছে।

তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ যা আমরা প্রায় করি না।
তাই আমাদের প্রথম কাজ রমজানে যে চাঁদ নিজে দেখা + দেখা যদি না ও যায়, দেখার ইচ্ছা নিয়ে সময়মত আকাশে চাঁদ কোথায় তা তালাশ করা।


একটু মৃত কিংবা মৃতপ্রায় সুন্নাহ জিন্দা করার যে কি মহিমা ইনশাআল্লাহ আরেকদিন সেটা আলোচনা করব।
তো সবাই আমরা অবশ্যই চাঁদ দেখব রমজানের।





২) রোজা রাখা : পুরো রমজানের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ রোজা রাখা। ইচ্ছা করে রোজা না রাখা পিওর বোকামি ছাড়া কিছুই না।


আল্লাহ তায়ালার আদেশ সরাসরি না বলা হয় এই রোজা না রাখলে।
কিছু কিছু মানুষ বাহানা দেয় যে অসুস্থ আমি, তাই রোজা রাখতে পারি না।

তাদের অসুস্থর নমুনা হয়, পেটে জালা করে, গ্যাস্টিক, বমি আসে ইত্যাদি ইত্যাদি।


রোজা একটি কষ্টের আমল, আল্লাহ তায়ালা এত্ত এত্ত এত্ত নিয়ামত দিতে রাজি আর আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটু কষ্ট করতে পারবেন না এটা কিভাবে সম্ভব।


আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য জান্নাত দান করে দিবেন কিন্ত আপনি রোজা রাখতে পারবেন না কষ্ট করে এটা কোন ভালো মানুষ এর কাজ হতে পারে না।


তারা হলো কপাল পোড়া। তাদের কপাল পুড়ে হয়ে যায় ছাই।
তবে সিরিয়াস অসুস্থতা যদি হয়, না খেলে যদি আপনার মারাত্মক সমস্যা হয়, বা ডাক্তার কম্পিলিটলি মানা করে দিয়েছে তাহলে তা ভিন্ন কথা সেদিকে ছাড় আছে।

সুস্থ হবার পর আপনি না রাখা রোজা গুলো আবার রাখতে পারবেন।

তবে ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখা এটা সম্মতি নাই।


আরেক কিসিমের লোক আছে যারা বাহিরে পর্দার ভিতরে গিয়ে খাবার খায় রমজান মাসে। এদের মত লাজ শরমহীন মানুষ হয় না।
রোজা রাখে তো রাখেই না সাথে পরিবেশ এ বিরুপ প্রভাব ফেলে।
চিন্তা করেন হাশরের ময়দানে এসব লাইভ টেলিকাস্টের মত দেখানো হবে।


পুরো বিশ্বে সকল মানুষ তা দেখবে আর বলবে এই সেই অপরাধী!

তো অবশ্যই আমাদের রোজা রাখতে হবে। নো কম্প্রোমাইজ!




৩) তারাবিহ র সালাত পড়া : আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে যে রোজা রাখসো কিন্ত তারাবি পড়ো নাই তাইলে ত তারাবি ও হইলো না রোজা ও হইলো না।


আমরা কমবেশি সবাই এটা শুনছি, সমাজে বহুল প্রচলিত একটা ভূল ধারনা।


তারাবির সালাতের সাথে রোজা হয়া বা না হয়ার কোন সম্পর্ক নাই।
হাদিস বাদ দেন, কোন জাল হাদিসেও এই কথা আসে নি যে তারাবি না পড়লে রোজা হবে না।

কিন্ত তারাবি পড়া সুন্নাহ। এটা উচিত আমাদের পড়া প্রতিদিন। তারাবির নামাযে গেলে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারি হাফেজদের কাছ থেকে
আর খুব শক্ত আমল ছিল রাসূল সা : এর পক্ষ থেকে।


কেউ আবার রাকাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করিয়েন না
২০ রাকাত ৮ রাকাত ৩৬ রাকাত এমন কি তার উপরের দলিল ও আছে।

আপনার কাছে যেটা প্রসিদ্ধ লাগে আপনি তার উপর আমল করবেন।
আপনার যতটুকু পারা যায় পড়বেন।



এখন আর কি বলব মসজিদ গুলাতে তারাবির সালাত হয় লেফট রাইটের মত। মনে হয় কেউ বাশ নিয়া পিছনে ধাওয়া করতেসে তাই তাড়াতাড়ি সেস কর‍তে হবে।


হাফেজ সাহেব ও বাধ্য হয়ে কমিটির কথা শুনে ১৬০ স্পিডে কিরাত পড়তে থাকে। কোন লাভ ই হয় না। না আপনে বুঝেন না অন্যকেউ।


কি যে পড়ে তা কেবল যে পড়াচ্ছে আর তার মালিক জানেন।

তাই যারা আমাদের মধ্যে প্রভাবশালী আছি বা কমিটিতে বলার সোর্স আছে তারা অবশ্যই বলবেন যে ধীরে হোক কিন্ত সুন্দর ভাবে যেন পড়া হয়, হাফেজ সাহেবের উপর চাপ প্রদান যাতে না করা হয়।


তো ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই তারাবির সালাত আদায় করব। তবে কাউকে এটা বলতে যাব না পড়তেই হবে না পড়লে রোজা হবে না।
এটা বলা যাবে না




৪) সাহরি খাওয়া : আমাদের দেশে উচ্চারণগত একটা মিস্টেক আছে যে সেহরি খাওয়া। আসলে এর সঠিক উচ্চারন সাহরি করা।
সেহরি খাওয়া বলে এর অর্থ হয় জাদু খাওয়া 😂।


যাই হোক এটা খুব বেশি প্রচলিত হয়ে গেসে, কিন্ত আমরা বুঝতে পারি কি বুঝানো হইসে।

সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে সাহরি না খেয়ে রোজা হয় না।
এটাও একটা ভূল ধারনা এবং কথা।


কেউ যদি সাহরি না খেয়ে রাতে খেয়েই ঘুমায়, কোনো কারনে উঠতে না পারে, আযান শুনে উঠে তাহলে কোন সমস্যা ছাড়াই তার রোজা রাখা যাবে।

তবে এভাবে ভূল বশত হলে সমস্যা নাই কিন্ত এটাকে রুটিন বানানো যাবে না। রুটিন বানালে খুব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ আমাদের মিস হয়ে যাবে যা মটেও সুখকর না।


আরেকটি ব্যাপার হলো সাহরিতে একটি / দুইটি খেজুর রাখা।
খেজুর খুব ই উপকারি এবং শক্তিশালী খাবার।
রাসূল সা: সাহরিতেও এক/দুটি খেজুর খেতেন।



৫) ইফতার করা : এটা তো আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই করি।
তবে ব্যাপার হলো আমরা যাতে খাওয়া সুরু করি খেজুর দিয়ে। আর খেজুর না থাকলে পানি খেয়ে ইফতারি শুরু করা ভালো।
আল্লাহর রাসূল এমনটাই করতেন।




৬) সাহরি দেরিতে করা এবং ইফতার দ্রুত/আগে করা : এটায় আমরা প্রায় সবাই গাফিলতা করি।
আমরা জিনিস টা উলটা বানায় ফেলসি। আমরা সাহরি দ্রুত করি মানে আগে ভাগে সেরে নি, আর ইফতার দেরিতে করি, আযান দিলে ধীরে সুস্থে।

কিন্ত হাদিসে এর পুরো উলটা আসছে।

আমাদের সাহরি খেতে হবে এই ধরুন আযানের ১০/১৫ মিনিট আগে। খাওয়ার উপর ডিপেন্ড। এমন হয়া যাবে না মুখে খাবার অইদিকে আযান দিচ্ছে। এত দেরী না আবার।

এমন একটা সময় বাছতে হবে যাতে খাওয়াও শেস আর তার ২/৪ মিনিট পর আযান দিলো।


আর ইফতারিতে দেরি না করে দ্রুত ইফতারি শুরু করা।
অনেকে এক্সট্রা সেফটির জন্য সূর্য ডুবে গেছে আযান হয়ে যাচ্ছে তাও ইফতারি শুরু করে না। এই এক্সট্রা সেফটি একেবারেই কাম্য না।

কারণ রাসূল সা: বলেন, সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতারি করতে হবে।


ইহুদি রাও রোজা রাখে, তারা অন্ধকার হবার পর রোজা বা তেমন কিছু ভাংগে।

তাই রাসূল সূর্য ডুবার পর যে ৫/৬ মিনিট আলো থাকে ঠিক সেই সময়ে ইফতারি শুরু করতে বলেছেন
তাই আমাদের কাজ হলো সূর্য ডুবে গেছে, ব্যাস ইফতারি শুরু করতে হবে।


অনেকে বলে সারাদিন রাখতে পারলি আর ১/২ মিনিট অপেক্ষা করলে কি হয়?
তাদের অবশ্যই সঠিক উত্তর টা বুঝিয়ে বলতে হবে এবং আমল করতে হবে।




আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ আমাদের সব করণীয় কাজ গুলো সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আর আমরা সব পালন ও করব ইনশাআল্লাহ
আজ ৬ টা বলা হলো।

নেক্সট পর্বে পরবর্তী কাজ গুলো বলব + আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।


মূল আলোচক : শাইখ আহমাদুল্লাহ

*




7 Comments 603 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024