FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

সংশোধন

সংশোধন

*

লেখকঃ ও হেনরি
সংশােধন
ও হেনরি

কারাগারের জুতাে কারখানায় জিমি ভ্যালেন্টাইন একমনেজুতাের উপরের অংশ জোড়া দিয়ে যাচ্ছিল, একজন রক্ষীএসে তাকে সামনের অফিসঘরে নিয়ে গেলওয়ার্ডেন জিমিকে মার্জনাপত্র ধরিয়ে দিলেন, আজ সকালেই গভর্নর সেটায় স্বাক্ষর করেছেন। জিমি একরকম ক্লান্ত ভঙ্গিতে ওটা নিল। চার বছরের সাজার ভেতর প্রায় দশ মাস পার করেছে সে। তার ধারণা ছিল বড়জোর মাস তিনেক থাকা লাগবে।জিমি ভ্যালেন্টাইনের মত লােক যার কিনা বাইরে হাজারটাবন্ধুবান্ধব রয়েছে, তার তাে পলক ফেলার আগেই বেরিয়ে
আসার কথা।“তা ভ্যালেন্টাইন,” ওয়ার্ডেন বললেন, “সকালে তােমাকেছেড়ে দেয়া হবে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে এবার একটু মানুষ হও। ভেতরে ভেতরে তাে তুমি লােক তত খারাপ না। এখন সিন্দুক ভাঙা বাদ দিয়ে সরলসােজা রাস্তায় বাঁচতে শেখ।"আমি?” জিমির গলায় বিস্ময়, “আমি ত জীবনে একটাও
সিন্দুক ভাঙিনি।”
“ও তাই ত! না, নিশ্চয়ই না।”, ওয়ার্ডেন হাসেন, “দেখ, ম্প্রিংফিল্ডের ব্যাপারটায় তুমি কীভাবে সাজা পেলে? খুব উঁচু সমাজের কেউ ফেঁসে যাওয়ার ভয়েই কি তুমি নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করাে নি? নাকি এক শয়তান বুড়াে জুরি
তােমার উপর খেপে ছিল? তােমার মত পরিস্থিতির শিকারদের বেলায় সবসময়ই এই দুটোর একটা খাটবেই।”“আমি?”, জিমি এখনও নিস্পাপ সারল্য ধরে রেখেছে,“আমি জীবনে স্প্রিংফিল্ডেই যাই নি!“ক্রোনিন, ওকে নিয়ে গিয়ে বাইরে পড়ার মত কিছু পােশাক দিয়ে দাও। সকাল সাতটায় ওকে বের করে বাইরের হাজতে নিয়ে য়েও। ভ্যালেন্টাইন, আমার কথাটা মনে রাখলে ভাল করব|পরদিন সকাল সােয়া সাতটায় জিমি ওয়ার্ডেনের বাইরের অফিসে এসে দাঁড়াল। গায়ে বেঢপভাবে তৈরি পােশাক, পায়ে শক্ত, মচমচে একজোড়া জুতাে, যেমনটা সরকার তার বাধ্যতামূলক অতিথিদের ছেড়ে দেবার সময় দিয়ে থাকে তেমনই।কেরানি তাকে একটা রেলের টিকেট আর একটা পাঁচডলারের নােট ধরিয়ে দিয়েছে, আইন আশা করে এ দিয়েই সে সভ্যতা এবং উন্নতির একেবারে চূড়ায় চড়ে বসবে।ওয়ার্ডেন তাকে একটা চুরুট দিয়েছিলেন, হাতও মিলিয়েছিলেন। নথিতে লেখা হল, ভ্যালেন্টাইন, ১৭৬২,গভর্নর কর্তৃক ক্ষমাকৃত; তারপরই মিঃ জেমস ভ্যালেন্টাইন সূর্যের আলােয় বেরিয়ে এলেন।পাখির গান, সবুজ গাছ, ফুলের গন্ধ, সবকিছু উপেক্ষা করে জিমি সােজা রেস্তোঁরায় চলে গেল। সেখানে মুক্তির আনন্দের প্রথম স্বাদটা নিল ঝলসানাে মুরগি আর সাদা ওয়াইনের সাথে – তারপর কারাপ্রধানের দেয়া চুরুটটার চেয়ে ভাল আরেকটা টানল। সেখান থেকে মন্থরগতিতে চলল।রেলডিপােতে। দরজার পাশে এক অন্ধের পেতে রাখা টুপিতে একটা সিকি ছুঁড়ে দিয়ে ট্রেনে চড়ে বসল সে। ঘন্টা তিনেক পড়ে প্রদেশ-সীমানার কাছে এক ছােট্ট শহরে এসে নামল,তারপর সে মাইক ডােলানের কাফেতে গিয়ে ঢুকে তার সাথে হাত মেলাল, বারের পেছনে একাই বসে ছিল সে।“আরও আগে কিছু করতে পারলাম না বলে দুঃখিত, জিমি,মাইক বলল, “কিন্তু স্প্রিংফিল্ডের বিক্ষোভটা সামলাতে হল,গভর্নরটাও আরেকটু হলে ঘাপলা বাঁধিয়ে ফেলেছিল। সব ঠিক আছে ত?”“ঠিক আছে। আমার চাবিটা আছে?”সে চাবিটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল, পেছন দিকের একটা দরজা খুলল। সবকিছু যেমনটি সে রেখে গিয়েছিল, ঠিকনতেমনই আছে। মেঝেতে এখনও বেন প্রাইসের গলার বােতামটা পড়ে রয়েছে, জিমিকে জোর করে গ্রেপ্তার করার সময় বিখ্যাত গােয়েন্দার জামা থেকে ওটা খসে পড়েছিল।দেয়াল থেকে একটা ভাঁজকরা বিছানা টেনে নামাল জিমি,তারপর একটা দেয়াল থেকে একটা প্যানেল সরিয়ে ফেলে একটা ধুলােমাখা সুটকেস টেনে বের করল৷ সেটা খুলে পূবের সেরা চুরির সরঞ্জামগুলাের দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধচোখে তাকিয়ে রইল সে৷ একটা সম্পূর্ণ সেট, বিশেষরকম ইস্পাতের তৈরি, আধুনিক নকশার ড্রিল, পাশ্চ, ব্রেস, বিট,জিমি, ক্ল্যাম্প, অগার, আরও দু'তিনটা জিনিস আছে যেগুলো জিমির নিজস্ব উদ্ভাবন, গর্বের সাথে জিমি ভাবে। এগুলি বানাতেই ওর নয়শ ডলারের বেশি গেছে, যেখান থেকে বানিয়েছে তারা পেশাদার কাজের জিনিস বানায়।।আধঘন্টার ভিতর জিমি সিঁড়ি বেয়ে নেমে কাফে থেকে বেরিয়ে এল, তার পরনে এখন রুচিশীল, সুন্দরভাবে ফিট করা পােশাক, হাতে সেই সুটকেস, এখন ধুলাে ঝেড়ে
পরিষ্কার করা হয়েছে।“কোন মতলব আছে?” মাইক ডােলান খুশিখুশি গলায় জিজ্ঞেস করল।“আমি?”, জিমি বিভ্রান্ত গলায় বলল, “বুঝলাম না। আমি
তাে নিউইয়র্ক যৌথ ক্ষুদ্র বিস্কিট, ক্র্যাকার এবং গমজাত পণ্য কোম্পানির একজন প্রতিনিধি।
একথায় মাইক এতই মজা পেল যে জিমিকে ওখানেই সেলজার-অ্যান্ড-মিল্ক গিলতে হল, সে আবার মদ-টদ ছুঁয়েও
দেখে না।
ভ্যালেনটাইন, ৯৭৬২-এর মুক্তির হপ্তাখানেক পরে ইন্ডিয়ানার রিচমন্ডে একটা সিন্দুক ভেঙে সাফ করে দেয়া
হল, কার কাজ কেউ জানে না, মােটে আটশ ডলার খােয়া গিয়েছে। তার দু'সপ্তাহ পর লােগানপাের্টে একটা পেটেন্ট
করা, উন্নত, চুরিনিরােধক সিন্দুক মাখন কাটার মত সহজে খুলে ফেলে পনেরশ ডলারের মুদ্রা গায়েব হয়ে গেল,সিকিউরিটি বন্ড আর রৌপ্যমুদ্রা স্পর্শও করা হয় নি। এবার
টনক নড়ল গােয়েন্দাদের। তারপর জেফারসন সিটিতে
একটা পুরাতন ধরনের সিন্দুকের পেট থেকে পাঁচ হাজার ডলারের ব্যাংক-নােট বের হয়ে গেল। এতসব ক্ষয়ক্ষতির কারণে ব্যাপারটার গুরুত্ব বেড়ে শেষমেষ বেন প্রাইসের হাতে গিয়ে পড়ল। নথিপত্র দেখে চুরিগুলির পদ্ধতিতে একটা
সুস্পষ্ট মিল পাওয়া গেল। বেন প্রাইস ঘটনাস্থলগুলিতে গিয়ে
তদন্ত করে মন্তব্য করলেন :“এটা ড্যান্ডি জিম ভ্যালেনটাইনের হাতের কাজ। সে তার
কাজকর্ম আবার শুরু করেছে। কম্বিনেশন নবটা দেখুন -বর্ষার দিনে শালগম টেনে তােলার মত সহজে টেনে বের করে
ফেলা হয়েছে। একাজ করার মত ক্লাম্প কেবল তারই আছে। আর দেখুন, টাম্বলারগুলাে কত সাবধানে বের করা
হয়েছে! জিমির কখনও একটার বেশি দুটো গর্ত করা লাগে না। হ্যাঁ, আমার ধারণা আমরা জিমি ভ্যালেন্টাইনকেই
খুঁজছি। এবার আর কোন সংক্ষিপ্ত সাজা বা ক্ষমাটমা পাবে
সে। ম্প্রিংফিল্ডের কেসে কাজ করার সময় থেকে বেন প্রাইস জিমির অভ্যাসগুলি জানত। লম্বা লম্বা লাফ, দ্রুত পালানাে, একলা চলা, উঁচু সমাজের দিকে ঝোঁক – সবমিলিয়ে সাজা
এড়ানাের জন্য ভ্যালেনটাইনের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল।সকলেই জানত এই ধূর্ত তস্করটির পেছনে লেগেছেন বেন
প্রাইস, তাতে বাকি যাদের চুরিনিরােধক সিন্দুক ছিল তারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিল।
এক বিকেলে জিমি ভ্যালেন্টাইন তার সুটকেস নিয়ে আরকানসাসে রেলরােড থেকে মাইল পাঁচেক দূরে একটা
ছােট্ট শহর এলমােরে একটা ডাকগাড়ি থেকে নামল।জিমিকে সদ্য কলেজফেরত সুঠাম তরুণের মত দেখাচ্ছিল,সে রাস্তার চওড়া পাড় ধরে হেঁটে হােটেলের দিকে রওনা
দিল।[]এক তরুণী মােড় ঘুড়ে এসে তার পাশ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে
উপরে 'এলমাের ব্যাংক লেখা একটা দরজা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছিল। জিমি ভ্যালেনটাইনের তার সাথে চোখাচোখি হল,
এবং মুহুর্তের মধ্যে জিমি নিজেকে ভুলে গিয়ে যেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে গেল। মেয়েটা চোখ নামিয়ে নিল, গালে
সামান্য রং ধরল তার। এলমােরে জিমির মত সুন্দর ফ্যাশনদুরস্ত তরুন সচরাচর দেখা যায় না।
ব্যাংকের সিঁড়িতে ঘুর ঘুর করা এক ছােকরাকে ধরল জিমি,যেন সে একজন অংশীদার। তারপর তাকে শহর সম্পর্কে
নানারকম প্রশ্ন করা শুরু করল, একই সাথে একটু পর পর একটা করে ডাইম ধরিয়ে দিয়ে চলেছে। একসময় সেই
তরুণী বেরিয়ে এল, সুটকেসওয়ালা তরুণের প্রতি রাজসিক
উপেক্ষা দেখিয়ে নিজের পথে চলে গেল।
“ঐ মেয়েটা পলি সিম্পসন না?” জিম চালাকি করে শুধােল।
“নাহ, ও ত অ্যানাবেল অ্যাডামস। ওর বাবা এই ব্যাংকটার
মালিক। আচ্ছা, আপনি এলমােরে এসেছেন কেন? ঘড়িতে
ওটা কি সােনার চেন? আমি একটা বুলডগ পুষব ভেবে
রেখেছি। ডাইমগুলাে কি সব শেষ?জিমি প্ল্যান্টারের হােটেলে গিয়ে রালফ ডি স্পেনসার।
পরিচয়ে রুম ভাড়া করল একটা। ডেস্কে ঝুঁকে কেরানির দৃষ্টি আকর্ষণ করল সে, সে এলমােরে একটা ব্যবসার জায়গা
খুঁজতে এসেছে। শহরে জুতাের ব্যবসা কেমন চলে? সে
ভাবছে জুতাের দোকান খুলবে একটা। সে সুযােগ আছে কি?জিমির পােশাক এবং আদবকায়দায় কেরানি মুগ্ধ হয়ে গেল।সে নিজে এলমােরের সজ্জাবিমুখ তরুণসমাজের ভেতরফ্যাশনের প্রতীকবিশেষ, কিন্তু এ মুহূর্তে তার নিজেকে তুচ্ছ
মনে হচ্ছে। জিমির টাই বাঁধার কায়দা বােঝার চেষ্টা করতে
করতে সে সাগ্রহে তথ্য সরবরাহ করে চলল।
হ্যাঁ, জুতাের ব্যবসা ভালই চলার কথা। এখানে কোন ভাল
জুতাের দোকান নেই৷ ওসব জিনিস শুকনােপণ্যের দোকান
আর মুদি দোকানে পাওয়া যায়। যেকোন ব্যবসাই এখানে।
ভাল চলবে। সে আশা করছে, স্পেনসারসাহেব এই
এলমােরেই থেকে যাবেন। থাকার জন্য শহরটা সুন্দর আর
লােকজনও খুব মিশুক।স্পেনসারসাহেব ভাবছেন উনি শহরে কিছুদিন থেকে অবস্থাবুঝে নেবেন। না, কেরানির কোন লােক ডাকা লাগবে না,সুটকেসটা তিনি নিজেই নিয়ে যাবেন, ওটা বেশ ভারি।
রালফ স্পেনসার, জিমি ভ্যালেন্টাইনের ছাই থেকে উঠে
আশা ফিনিক্স – যে ছাই কোন এক হঠাৎ জ্বলে উঠে ছড়িয়ে
পড়া প্রেমের শিখার অবশেষ মাত্র - এলমােরেই থেকে গেল,]উন্নতি করতে লাগল। একটা জুতাের দোকান খুলে বেশ জমিয়ে ফেলল।
সামাজিকভাবেও সে বেশ সফল এবং অনেক বন্ধুও হল তার। এবং তার মনের ইচ্ছাটিও পূরণ হল। মিস অ্যানাবেল
অ্যাডামসের সাথে তার সাক্ষাৎ হল, এবং প্রতিবারই সে
আরও শক্তভাবে বাঁধা পড়ল।বছরশেষে মিঃ রালফ স্পেনসারের অবস্থা দাঁড়াল এরকম :
সে সমাজের মন জয় করেছে, তার জুতাের দোকান খুব
চলছে, এবং দু'সপ্তাহের ভিতর তার আর অ্যানাবেলের
বিয়ের কথা ঠিক হয়ে গেছে। মিঃ অ্যাডামস, একজন
সাধারণ বৈচিত্র্যহীন আঞ্চলিক ব্যাংকার, স্পেনসারকে মেনে নিয়েছেন। তাকে নিয়ে অ্যানাবেলের অহংকার আর ভালবাসা প্রায় সমান সমান। অ্যাডামস পরিবার আর অ্যানবেলের বিবাহিতা বােনটির সাথে তার বােঝাপড়া হয়ে গেছে, যেন সে এর মধ্যেই পরিবারের একজন হয়ে গেছে।
এক দিন জিমি তার রুমে বসে চিঠি লিখছিল, যেটা সে তার
সেন্ট লুইসের পুরােন বন্ধুদের গােপন ঠিকানায় পাঠাবে :
প্রিয় বন্ধু: আমি চাই তুমি আগামি বুধবার রাত ন'টায় লিটল
রকের সালিভানের ওখানে থাকবে। তােমাকে আমার জন্য ছােট্ট একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি তােমাকে আমার
যন্ত্রপাতিগুলােও দিয়ে দেব। আমি জানি ওগুলাে পেলে তুমি
খুশিই হবে – হাজার ডলার খরচ করলেও তুমি ওরকম আর[লপাবে না৷ বিলি, আমি বছরখানেক হল আগের ব্যবসা বাদ দিয়েছি। এখন আমার সুন্দর একটা দোকান আছে, আমি
সৎ উপার্জন করি। এবং পৃথিবীর সেরা মেয়েটিকে আমি
বিয়ে করছি দু'সপ্তাহের ভেতরেই। এটাই আসল জীবন, বিলি
- সহজ জীবন। এখন লাখটাকা দিলেও আমি আরেকজনেরএকটা ডলার স্পর্শ করব না। বিয়ের পর আমি সব বেচে দিয়ে পশ্চিমে চলে যাব, সেখানে পুরােনাে শত্রুতার জেরে পড়ার ভয় কম। আমি তােমাকে বলে রাখছি, বিলি, ও একটা
দেবদূতের মতন। সে আমাকে বিশ্বাস করে, আর আমিও
পুরাে পৃথিবীর জন্য হলেও আরেকটা পাপকাজ করব না|লিটন ওয়ার্সাকলির ওখানে থাকতে ভুলাে না, তােমার সাথে আমার দেখাকরতেই হবে। আমি যন্ত্রপাতিগুলাে নিয়ে আসব।
তােমার পুরােনাে বন্ধু,জিমি।জিমি এ চিঠি লেখার পরের সােমবার রাতেই বেন প্রাইস
একটা বগিতে করে নিঃশব্দে এলমােরে এসে ঢুকলেন। তিনি চুপচাপ শহরটাকে এখানেসেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন,
যতক্ষণ না যা জানা দরকার জানতে পারলেন| স্পেনসারেরজুতাের দোকানের সামনের রাস্তার ঠিক ওপাশের ওষুধের
দোকান থেকে তিনি রালফ ডি স্পেনসারের মুখটা ভাল করে দেখে নিলেন।
“ব্যাংকারের মেয়ে বিয়ে করবে জিমি?” নিজের মনেই আস্তে
করে বলে উঠলেন বেন, “কী জানি!”সকালের নাস্তার পর পরিবারটি সবাই একসাথে শহরতলীর
দিকে রওনা দিলেন – মিঃ অ্যাডাম, অ্যানাবেল, জিমি,অ্যানাবেলের বিবাহিতা বােন, তার দুটি ছােট মেয়ে, তাদের
বয়স পাঁচ আর নয়। তারা জিমি যে হােটেলে থাকতে সেখানে আসলেন, জিমি দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে সুটকেসটা নিয়ে
আসল। তারপর তাঁরা গেলেন ব্যাংকে। সেখানে জিমির ঘােড়া
-বগি আর ডলফ গিবসন দাঁড়িয়ে ছিল, যারা কিনা তাঁদের
রেলরােড স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাবে।সবাই মিলে ব্যাংকঘরের উঁচু নকশাকরা ওক কাঠের রেলিং
ধরে উঠে গেলেন - জিমিও সাথে আছে, কেননা মিঃ[লঅ্যাডামসের হবু জামাই সবখানেই সমাদৃত হবে। সেখানের কেরানিরাও তার
সুদর্শন ভদ্র তরুণের সম্ভাষণে সন্তুষ্ট, যে কিনা মিস অ্যানাবেলকে বিয়ে করবে। জিমি তার সুটকেসটা নামিয়ে রাখল। খুশি আর তারুণ্যে অ্যানাবেলের বুক ঢিপঢিপ করছেসে জিমির টুপিটা পড়ে সুটকেসটা তুলে নিল। “আমাকে
দেখতে একেবারে বাদকদের মত লাগছে না?” অ্যানাবেল
বলল, “ওমাগাে! রালফ, এটা এত ভারি কেন? ভেতরে
সােনার টুকরােয় ভরা মনে হচ্ছে।”“ওর ভিতর অনেক নিকেলে মােড়ানাে শুহর্ন আছে,” জিমি
শান্তভাবে বলল, “যেগুলাে আমাকে ফেরত দিতে হবে।ভাবলাম নিজে সাথে করে নিয়ে গেলে পাঠানাের খরচটা
বেঁচে যায়। আজকাল কিপটেমি বােধহয় বেড়ে যাচ্ছে আমার।”এলমাের ব্যাংকে সদ্য নতুন একটা সিন্দুক আর ভল্ট বসানাে হয়েছে। মিঃ অ্যাডামস সেটা নিয়ে খুব গর্ব করছেন আর
সবাইকে ডেকে ডেকে খুঁটিয়ে দেখতে বলছেন। ভল্টটা ছােট,কিন্তু তার দরজাটা নতুন ধরণের, পেটেন্ট করা। তিনটা শক্ত ইস্পাতের বােল্ট পাশাপাশি একটা হাতলের উপর বসিয়েআটকানাে রয়েছে, একটা টাইমলকও আছে। মিঃ স্পেনসার
ভদ্রোচিত এবং অনতিউৎসাহীভাবে প্রশ্ন করলে মিঃ
অ্যাডামস বিপুল উৎসাহে ওটার কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করলেন।মে আর আগাথা নামের বাচ্চাদুটি চকচকে ধাতু আর অদ্ভুত
তালা আর নব দেখে মজা পাচ্ছিল।এসব যখন ঘটছে, তারই মধ্যে বেন প্রাইস সাবধানে এসে
ঢুকলেন, তারপর রেলিংয়ে কনুই ভর দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে ভেতরে দেখতে লাগলেন। হিসাবরক্ষককে জানালেন
তিনি কিছু চান না, শুধু এক পরিচিত লােকের জন্য অপেক্ষা
করছেন।হঠাৎ দুটি মহিলা চিৎকার করে উঠলেন, একটা হট্টগােলতৈরি হল। বড়রা যখন খেয়াল করছিল না, তখন ন'বছরের
মেয়ে খেলতে খেলতে আগাথাকে ভেতরে আটকে ফেলেছে।
তারপর সে বােল্টগুলি আটকে মিঃ অ্যাডামসকে যেমন
করতে দেখেছে, সেভাবে নবটা ঘুরিয়ে দিয়েছে।বৃদ্ধ ব্যাংকার লাফিয়ে হাতলের কাছে টান মেরে দেখলেন
এক মুহুর্তের জন্য। দরজা খােলা যাবে না, ককিয়ে
উঠলেন তিনি, “ঘড়িতে চাবি দেয়া হয় নি, কম্বিনেশনও সেট
করা নেই।”
আগাথার মা হাতপা নেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন।“চুপ! সবাই একটু থাম, কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে মিঃ
অ্যাডামস বললেন, তারপর যত জোরে পারেন হাঁক দিলেন,“আগাথা! শােন আমার কথা।”নীরবতার ভেতর সবাই শিশুটির ক্ষীণ আওয়াজ শুনল,অন্ধকার ভল্টের ভেতর প্রবল আতংকে সে পাগলের মত
চিৎকার করছে।
“আমার মেয়েটা!” মা চিৎকার করেই চলেছেন, “ওতো
ভয়েই মারা যাবে! দরজা খােল! ওহ, ভেঙে ফেল না!এতগুলাে লােক কেউ কিছু করতে পারছ না?”“এ দরজা খুলতে পারে এমন লােক লিটল রকের ধারে কাছে নেই,” মিঃ অ্যাডামসের গলা কাঁপছে, “ইশ্বর! স্পেনসার, কীকরব আমরা? বাচ্চাটা – সে তাে ওর ভেতর বেশিক্ষণ
থাকতে পারবে না। বাতাস নেই, তারপর ভয়ে খিচুনি ধরে
যাবে যে।"আগাথার মা, এখন উন্মাদিনী অবস্থা, হাত দিয়ে ভল্টের
দরজায় আঘাত করে চলেছেন। কে একজন ডিনামাইটের
কথা তুলল। অ্যানাবেল জিমির দিকে ঘুরল, তার বড় বড়চোখে যন্ত্রণা, কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়া হতাশা নেই। একটা
মেয়ের কাছে তার ভালবাসার মানুষের ক্ষমতার সীমা-
পরিসীমা থাকে না।“কিছু একটা করতে পার না, রালফ? – চেষ্টা তাে কর
অন্তত!”জিমি তার দিকে সাগ্রহ দৃষ্টিতে তাকাল, ঠোঁটে অদ্ভুত শান্ত
একটা হাসি।
ঠিক শুনছে“অ্যানাবেল, তােমার পরনের ঐ মাথার পিনটা খুলে আমায়মদেবে?”
কিনা বিশ্বাসই করতে পারছে না, তবু জামার বুকের কাছটা থাকা পিনটা বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিল সে। জিমি সেটা বুকপকেটে রেখে দিল, কোটটা ছুড়ে ফেলল,শার্টের হাতা গুটিয়ে তুলে ফেলল; সেই সাথে রালফ ডি
স্পেনসার মরে গিয়ে, সেখানে আবার জিমি ভ্যালেন্টাইন
জুড়ে বসল।“দরজার সামনে থেকে সবাই সরে যান।” সংক্ষেপে নির্দেশ
দিল সে।সুটকেসটা টেবিলে রেখে সে হাট করে মেলে ধরল। তারপর
তাকে দেখে মনেই হল না আশেপাশে যে আরও লােকজন আছে সে খেয়াল তার আছে। চকচকে, অদ্ভুতদর্শন যন্ত্রগুলি দ্রুত এবং সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাখল, পুরাে সময় আপন মনে শিস বাজিয়ে চলেছে, যেমনটা কাজের সময় সে করত।সকলে নীরব-নিশ্চলভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কাজ দেখতে
লাগল।
এক মিনিটের ভেতর জিমির প্রিয় ড্রিলটা ইস্পাতের দরজা
ফুটো করা শুরু করল| দশ মিনিটের মাথায় – তার নিজের
চৌর্যবৃত্তির রেকর্ড নিজেই ভেঙে – সে বােল্টগুলি ছুড়ে ফেলে দরজা
খুলে ধরল।আগাথা প্রায় অজ্ঞান, কিন্তু সুস্থ অবস্থায় তার মায়ের কোলে]গিয়ে পড়ল। জিমি ভ্যালেন্টাইন কোটটা পড়ে নিল, সামনের দরজার রেলিংএর বাইরে হেঁটে চলে এল। হাঁটার সময় তার মনে হল একটা দূরাগত কন্ঠস্বর, সেটা হয়ত কোন এক সুদূর অতীতে
চিনত সে, ডাকল তাকে, “রালফ!” কিন্তু সে কোন দ্বিধা করলনা
।দরজায় একটা বড়সড় চেহারার লােক তার পথ আগলে
দাঁড়িয়ে রয়েছে।“হ্যালাে, বেন!” এখনও অদ্ভুতভাবে হাসছে জিমি, ‘শেষমেষ এসে পড়লেই, তাই না? বেশ, চল তবে এখন আর কিছুতে
কিছু আসে যায় কিনা তাও আমি আর জানি না।”এবং বেন প্রাইসের আচরণও অদ্ভুত।
“আপনি বােধহয় ভুল করছেন, মিঃ স্পেনসার, আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। আপনার বগিটা বােধহয়
আপনার জন্য বসে আছে, তাই না?”বলে
বেন প্রাইস ঘুরে রাস্তা ধরে হেঁটে চলে গেলেন

--------

সংগৃহীত(তামিম)


লেখক ও হেনরি এমন একজন লেখক ছিলেন যে কেবল গল্প লেখার জন্য মানুষের বাড়ির দরজায় কান পেতে থাকত এ জন্যই হয়তবা তার গল্প এ সাধারণ মানুষের চরিত্র ফুটে উঠে তবে এসবের জন্য তিনি অনেক কারাবরন ও করেছেন পুরো গল্পটা একবারে দিয়ে দিলাম আমার জীবনের পড়া সবচেয়ে ভালো গল্প -ura- তবে সবটা একবারে পড়তে হবে মনোযোগ দিয়ে তা না হলে কিছুই বুঝবেন না

-tata-

*




1 Comments 542 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024