৪৯ খ্রিষ্টপূর্বে জুলিয়াস সিজার রোমের দিকে যাওয়ার সময় রুবিকান নামের একটা ছোট নদী পার হয়েছিলেন। সেটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ হয়ে ওঠার পথে তাঁর প্রথম পদক্ষেপ। জুলিয়াস সিজার ছিলেন সম্ভ্রান্ত রোমান পরিবারের সন্তান। সেনাবাহিনীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বুদ্ধিমান মিলিটারি জেনারেল হিসেবে। কিন্তু এই অর্জন তাঁর মতো মানুষের জন্য ছিল খুব সামান্য। তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিবিদ, প্রতিভাবান লেখক, প্রভাবশালী বক্তা এবং রোমের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
##গলের পতন##
সিজারের বয়স যখন চল্লিশের কোঠায়, তিনি তখন বিশেষ দূত হিসেবে নির্বাচিত হন। তারপর খ্রিষ্টপূর্ব ৬০–এ জোট গঠন করেন মার্কাস ক্র্যাসাস ও পম্পির সঙ্গে। এই দুজন ছিলেন সে সময় রোমের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গলে (এখনকার ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ডের অধিকাংশ এলাকা, ইতালির উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ, নেদারল্যান্ড ও জার্মানি) সামরিক অভিযানে সাফল্যের পর সিজার রোমের সবচেয়ে সফল জেনারেল হিসেবে প্রশংসিত হন।
তাতে রোমের সিনেটরদের মনে ভয় দানা বাঁধে। তাঁরা ভাবেন, সিজার যেকোনো সময় ক্ষমতা দখল করতে পারেন। এ জন্য গল থেকে ফিরে আসার আগেই সিনেটররা সিজারের সেনাদল ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
##সৌভাগ্যের নদী##
রুবিকান ছিল জুলিয়াস সিজারের জন্য সৌভাগ্যের নদী। লাতিন শব্দ রুবিকান এসেছে রুবিয়াস থেকে, এর অর্থ লাল। লাল রঙের কাদার জন্য নদীটিকে লালচে দেখাত। প্রাচীন রোমের প্রচলিত একটা আইন অনুসারে সক্রিয় সেনাদলসহ জেনারেলদের রুবিকান নদী পার হওয়া এবং রোমে প্রবেশ করা ছিল নিষিদ্ধ।
সিজারকে দুটির যেকোনো একটি বেছে নিতে হতো—সেনাদল ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করা অথবা রুবিকান নদী পার হয়ে নিজেই ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা। শেষেরটাই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। শেষমেশ ‘পাশা ছুড়ে দেওয়া হয়েছে’ (দ্য ডাই হ্যাজ বিন কাস্ট) বলে হুংকার দিয়ে রুবিকান নদী পার হন সিজার।
##ক্ষমতার লড়াই##
সেনাবাহিনীসহ রোমে পা রাখতেই সিজার প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হন। বেধে যায় প্রচণ্ড যুদ্ধ। সিজার অবশেষে জয়ী হন প্রচুর রক্তক্ষয়ের পর। বিজয়ী সিজার তখন নিজেকে আজীবনের জন্য রোমের সম্রাট এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঘোষণা করেন।
##সিজার রোম জয়ের আগে##
অসাধারণ সামরিক সক্ষমতার জন্য রোম ছিল বিশ্বের কাছে পরাক্রমশালী শক্তি। রোমের পুরো সামরিক বাহিনী ৩০টি দলে ভাগ করা ছিল। প্রতি দলে ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ৫ হাজার সেনা। এই সেনারা নিয়মিত উচ্চহারে বেতন পেতেন। সাম্রাজ্য দ্রুত বাড়তে থাকায় রোমে নানান প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়। প্রকৌশলীরা দূরদূরান্ত থেকে শহরে পানি আনার জন্য কৃত্রিম নালার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন।
##সিজার রোম জয়ের পরে##
৬৪ খ্রিষ্টাব্দে রোমে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। এতে শহরের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়। অভিযোগ ছিল, সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেননি রোমের তৎকালীন সম্রাট নিরো। ৩১৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা কন্সট্যানটিন হলেন প্রথম রোমান সম্রাট, যিনি খ্রিষ্টধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টানদের ওপর কয়েক শতাব্দী ধরে চলা রোমানদের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়।
##আপনি জানেন কি?##
জুলিয়াস সিজার একবার জলদস্যুদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন। দস্যু বাহিনীকে তিনি বোঝাতে সক্ষম হন যে তাঁকে ছেড়ে দিলে তিনি তাদের প্রচুর টাকাপয়সা দেবেন। তবে, সিজার কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি, ছাড়া পেয়ে তিনি তাদের হত্যা করেছিলেন। এ ছাড়া জুলিয়াস সিজার প্রথম ৩৬৫ দিনে বছরের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন। আজকের দিনে আমরা যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, সেটা ওই ক্যালেন্ডারেরই উত্তরসূরি। জুলাই মাসের নামকরণ করা হয় জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে।
##যেভাবে দুনিয়া বদলে গেল##
রিপাবলিকানদের কাছ থেকে সিজারের ক্ষমতা দখলের ফলে রোম এক ব্যক্তির শাসনের অধীনে চলে যায়। সিজারের উত্তরাধিকারীরা ক্ষমতারও উত্তরাধিকারী হন। এমনকি তাঁরা নিজেদের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্রাট হিসেবেও দাবি করতেন এবং দেবতাদের মতো পূজনীয় হওয়ার নিয়মও করা হয়।
সূত্র: হান্ড্রেড ইভেন্ট দ্যাট মেড হিস্ট্রি
:::Source//prothomalo.com