FriendsDiary.NeT | Friends| Inbox | Chat
Home»Archive»

নিজেকে ‘অফ’ করে আবার ‘অন’ করো ।

নিজেকে ‘অফ’ করে আবার ‘অন’ করো ।

*


কারও কাছে তিনি ‘শার্লক’, কারও কাছে আবার ##‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’##। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘হলিউড ওয়াক অব ফেম’-এও সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ##বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের## তারকাখচিত নাম। সেখানে ছোট্ট একটি বক্তৃতা দেন এই ব্রিটিশ অভিনেতা। সেই বক্তৃতা ও তাঁর সাম্প্রতিক কিছু সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ নিয়ে আজকের কথামালা।

##মা-বাবা ও বোনের জন্য…##

খ্যাতি খুব অদ্ভুত জিনিস। স্বীকৃতি, অনুমোদন আর ভালোবাসার খোঁজ করতে করতে অনেক সময় খ্যাতি পর্যন্ত পৌঁছে যায়মানুষ। কিন্তু আমি এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে ভালোবাসা আর ভালো কাজের স্বীকৃতি কখনো খুঁজে নিতে হয়নি। আমার মা-বাবা আমাকে এত ভালোবাসা, স্নেহ আর প্রেরণা দিয়েছেন যে,কোনো দিন খ্যাতির প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। আজ তাঁরা এখানে আসতে না পারলেও আমি জানি কোথাও না কোথাও বসে ফোন বা টিভিতে আমাকে দেখছেন। মা-বাবা,হ্যাঁ, তোমাদের দুজনকেই বলছি, তোমাদের ধন্যবাদ। কারণ, দুজনের সেরা দিকগুলো তোমরা আমাকে দিয়েছ, আর এ জন্যই আজ আমি এখানে দাঁড়াতে পেরেছি। কথা দিচ্ছি, শিগগিরই তোমাদেরও এখানে নিয়ে আসব। তখন তোমরাও এইওয়াক অব ফেইমে আমার নামের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিতে পারবে।

আরেকজন মানুষের কথাও আজকের দিনে বিশেষভাবে মনেকরতে চাই। আমার বোন (ট্রেসি পিকক), গত বছর যাকে আমরা ক্যানসারের কারণে হারিয়েছি, আমার প্রতি তার ছিল অগাধ আস্থা, সমর্থন আরভালোবাসা। সে আজ থাকলে আমাকে ঘিরে সবার এত উচ্ছ্বাস, এত উদ্‌যাপন দেখে খুশিতে ফেটে পড়ত! হাসতে হাসতে খুশিতে তার চোখ দিয়েএতক্ষণে হয়তো পানি পড়তে শুরু করত।আমার বিশ্বাস, সত্যিকারের তারাদের ফাঁক গলিয়ে সে হয়তো এখন আমাকে দেখছে।আমি জানি, সে আমাকে শুনতে পাচ্ছে। তাই তার উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা তোমাকে খুব মিস করি। তুমি আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আর স্মরণীয় অংশ।

##পরিবার প্রেরণার উৎস##

শিল্পী পরিবারে জন্ম আমার। মা-বাবা দুজনই মঞ্চাভিনেতা। আমাকে তাঁরা একটা নিরাপদ আর সচ্ছল শৈশব দিয়েছেন। শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদন, আদর, ভালোবাসা, সুযোগ–সুবিধা—কোনো কিছুতেই কোনো খামতি রাখেননি। তবে নিজেরা পেশাদার অভিনেতা হলেও, শুরুর দিকে আমার অভিনয়ে আসা নিয়ে তাঁদের মনে দ্বিধা ছিল।

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। পারিবারিক সূত্রে তত দিনে অভিনয়ের নেশা আমাকেও পুরোপুরি কাবু করে ফেলেছে। ওই রাতে আমি অ্যামেদিউস নাটকে পারফর্ম করে বাড়ি ফিরছিলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার বাবা। গাড়ির পার্কিং লটে এসে বাবা আমার কাঁধে হাতরাখলেন। বললেন, ‘দেখো, তুমি অভিনয়টা আমার চেয়েও ভালো করো। আজ থেকে আমি তোমার সঙ্গে আছি। তুমি অভিনয়টাই করো। একদিন তুমি সেরা অভিনেতাদের একজন হয়ে উঠবে, এটা দেখার জন্য আমার তর সইছে না।’

ওই রাতের গল্পটা যতবারই বলি, গলার কাছে কথাগুলো কেমন আটকে যায়। বাবা হিসেবে তার সন্তানকে এমন কিছু বলা কিন্তু বিরাট একটা ব্যাপার। এমন নিঃস্বার্থ পবিত্র ভালোবাসা, এমন অমূল্য আশীর্বাদ মা–বাবারাই দিতে পারেন। আর এ জন্যই তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের তাড়না আমাকে প্রতিদিন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

##দার্জিলিংয়ের দিনগুলো##

১৯ বছর বয়সে টাকা জমিয়ে পাঁচ মাসের জন্যদার্জিলিংয়ের সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি এলাকার একটা আশ্রমে গিয়েছিলাম। ওই আশ্রমে আমি গিয়েছিলাম ইংরেজি শেখাতে। কিন্তু পাঁচ মাসে আমিই শিখে এসেছি অনেক কিছু, যা এখনো আমাকে জীবন চলার পথে অনেক সাহায্য করে।

মোট পাঁচজন প্রশিক্ষক গিয়েছিলাম ওই বৌদ্ধমন্দিরে। ওখানে যাওয়ার জন্য এক বছর আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছোট ছোট খণ্ডকালীন চাকরি করে টাকা জমাতে হয়েছে। এরপর শিক্ষক হিসেবে আলাদা প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। এত সবের পর ওখানে গিয়ে মনে হয়েছে, সব পরিশ্রম সার্থক।

খুব ছোট একটা আশ্রম ছিল। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ছাড়া আর কারও ওখানে থাকার অনুমতি নেই। আর ভিক্ষুদের জীবনযাপন আমাদের থেকে পুরোপুরি আলাদা। দ্বিতল ওই আশ্রমের ওপরের তলায় ছিল বৌদ্ধমন্দির আর নিচতলায় ভিক্ষুদের সঙ্গে থাকতাম আমি। থাকার জায়গাটা ছিল স্যাঁতসেঁতে আর বড় বড় মাকড়সায় ভরা। আবার অন্যদিকে আশ্রমটা এত উঁচুতে ছিল যে আমার ঘরের জানালা খুললেই মেঘ ঢুকে পড়ত। চারপাশ এত অপূর্ব সুন্দর আর জীবনযাপন ওখানে এত নির্মল ও শুদ্ধ ছিল—সশরীরে উপলব্ধি না করলে বোঝানো যাবে না। ওখানকার নীরবতা অনেক কথার চেয়েওশক্তিশালী। ভিক্ষুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমিও দিনে চার ঘণ্টা ঘুমাতাম, সবজি আর স্যুপ খেতাম আর দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতাম ধ্যান করে। পাঁচ মাসের সেই সফর থেকে স্থিরতার যে অভ্যাস গড়তে পেরেছি, এটাই জীবনের অর্জন।

##ধ্যান ও স্থিরতা##

চলচ্চিত্র বা এ ধরনের যেকোনো সৃজনশীল মাধ্যমে কাজ করলে জীবনে মাঝেমধ্যে অস্থিরতাভরকরতে পারে। আর একজন অভিনেতার জীবন তো চড়াই-উতরাই, ভাঙা-গড়ায় ভরা। নিজেকে সব অস্থিরতা থেকে দূরে রাখতে, নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে প্রতিদিন তাই সময় করে ধ্যান করি। বৌদ্ধভিক্ষুদের থেকে কোনো মন্ত্র আমি শিখে আসিনি। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় শুধু মাথার ভেতর থেকে সব কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তা দূর করে দিই। সমস্ত মনোযোগ ঢেলে দিই আমার নিশ্বাসে। মাথাটা ফাঁকা করে দিই। মনটাকে খুলে দিই। শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামাটাই অনুভব করি। সেই সঙ্গে সুযোগ হলে যোগব্যায়াম করি। যে রাতে লম্বা সময় ধরে কাজ করতে হয়, অনেক ধকল যায় বা ঘুম হয় না, পরদিন সকালে ধ্যান করাটা আমার রুটিনে অপরিহার্য হয়ে যায়। কারণ, মন সজাগ না থাকলে, কোনো কাজই সফল হয় না।

একটা ছোট টোটকা দিই। যখন দিনটা খুব বাজে যাবে, এলোমেলো অবস্থা, চাপে-দুশ্চিন্তায় হাঁসফাঁস লাগবে, মনে হবে কোনো কিছু সামলানো যাচ্ছে না; কিছু সময়ের জন্যনিজেকে তখন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলো।নিজেকে ‘অফ’ করে আবার ‘অন’ করার মতো। বেশিক্ষণের জন্য না, ৫ থেকে ১০ মিনিট নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে দেখো, কী অসাধারণ অনুভূতি হয়। দেখবে, সারা দিন চেষ্টা করেও যে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছিল না, ৫ মিনিটের বিচ্ছিন্নতা থেকেই সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান বেরিয়ে আসছে। অথবা একটু আগেই যে পরিস্থিতি অসহনীয় লাগছিল, দেখবে ১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার নতুন শক্তি পেয়ে গেছ। এই ৫-১০ মিনিট তুমি নিজের মনকে দাও। শান্ত হয়ে দম নাও। শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দাও। দেখবে নিজের পেছনে এইটুকু সময়ের বিনিয়োগ, তোমার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেবে।

##ইংরেজি থেকে অনুদিত:##
##সূত্র: এসকোয়ার ম্যাগাজিন, ইন্টারভিউ ডটকম, ভ্যারাইটি, নোবেলম্যান ম্যাগাজিন ও ওয়াক অব ফেইমের ইউটিউব চ্যানেল##

*




0 Comments 361 Views
Comment

© FriendsDiary.NeT 2009- 2024